পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
জননী

এবার স্কুলে না দিলেই নয়, বাড়িতে ওর পড়াশােনা হইতেছে না। শীতলকে বলিয়া লাভ হয় না, কথাগুলি সে গ্রাহ্য করে না। শ্যামা শেষে একদিন পরামর্শ জিজ্ঞাসা করিতে গেল বিষ্ণুপ্রিয়ার বাড়ি।

 বিষ্ণুপ্রিয়া বলিল, এক কাজ কর না? আমাদেব শঙ্কর যেখানে পড়ে তোমার ছেলেকে সেইখানে ভর্তি করে দাও। শঙ্কর তাে গাড়িতে যায়, তােমার ছেলেও ওর সঙ্গে যাবে। তবে ওখানে মাইনে বেশি, বড়লােকের ছেলেরাই বেশির ভাগ পড়ে ওখানে। আর—ওখানে ভর্তি করলে ছেলেকে ভাল ভাল কাপড় জামা কিনে দিতে হবে—একদিন যে একটু ময়লা জামা পরিয়ে ছেলেকে স্কুলে পাঠাবে তো পারবে না। হেডমাষ্টার সায়েব কিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভালবাসে।

 বিষ্ণুপ্রিয়া আজও শ্যামার উপকার করিতে ভালবাসে কিন্তু আসিলে বসিতে বলে না, কথা বলে অনুগ্রহ করার সুরে। বিষ্ণুপ্রিয়ার সেই মেয়েটির বয়স এখন প্রায় এগারো। বেণী দুলাইয়া সে স্কুলে যায়, দেখিয়া এখন আর বুঝিবার উপায় নাই কদর্য পাপের ছাপ লইয়া সে জন্মিয়াছিল। শুধু মনে হয়, মেয়েটা বড় রোগা। বিষ্ণুপ্রিয়ার আর একটি মেয়ে হইয়াছে, বছর তিনেক বয়স। বিষ্ণুপ্রিয়া এখন আবার সাজগোজ করে তবে আগের মত দেহের চাকচিক্য তাহার নাই, এখন চকচক করে শুধু গহনা অনেকগুলি।

 ভারি চিন্তিয়া শ্যামা বিধানকে শঙ্করের স্কুলেই ভতি করিয়া দিল। শঙ্কর বিষ্ণুপ্রিয়ার খুড়তুতাে বোনের ছেলে, এবার সেকেণ্ড ক্লাশে উঠিয়াছে। বয়সের আন্দাজে ছেলেটা বাড়ে নাই, বিধানের চেয়ে মাথায় সে সামান্য একটু উঁচু। ভারি মুখচোরা লাজুক ছেলে, গায়ের রঙটি টুকটুকে। যত ছােট দেখাক সে সেকেণ্ড ক্লাশে পড়ে, স্কুলের অভিজ্ঞতাও তাহার আছে। বিধানকে শ্যামা তাহার জিম্মা করিয়া দিল। চিবুক ধরিও চুমা খাইয়া ছেলেকে দেখাশােনা করার জন্য শ্যামা তাহাকে এমন করিয়াই বলিল যে লজ্জায় শঙ্করের মুখ রাঙা হইয়া গেল।

 সারাদিন শ্যামা অন্যমনস্ক হইয়া রহিল। ভাবিবার চেষ্টা করিল বিধান স্কুলে কি করিতেছে। শ্যামার একটা ভয় ছিল স্কুলে বড়লােকের ছেলের সঙ্গে বিধান মানাইয়া চলিতে পারিবে কিনা। গরীবের ছেলে বলিয়া