পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
৫৭

 হুঁ, কটা টাকা আর পাইনে আমি,—উপরি পেয়েছি কাল। একটি পয়সা তে দেও না আমায়, খরচ চলে কিসে উপরি না পেলে?

 খরচ চলে? শীতল তাহা হইলে আবও উপরি টাকা পায়, খুসিমত খরচ করে। তাহাকে যে টাকা আনিয়া দেয় তাই সব নয়? শ্যামা রাগিগা বলে, কি রকম উপরি পাও শুনি?

 দশ বিশ টাকা, আর কত?

 নিশ্চয় আরও বেশি, মিথ্যে বলছ বাবু তুমি। নিজে নিজে খরচ কর তো সব? আমার এদিকে খরচ চলে না, ছেঁড়া কাপড় পরে আমি দিন কাটাই।

 আরে মুস্কিল, তাই তো কাপড় কিনে আনলাম। আচ্ছা তো নেমকহারাম তুমি।

 শ্যামা রঙীন কাপড়খানা নাড়াচাড়া করে মিষ্টি করিয়া বলে, কি টানাটানি চলছে বোঝ না তো কিছু। কি কষ্টে যে মাস চালাই, ভাবনায় রাতে ঘুম হয় না। দুচারটে টাকা যদি পাও কেন নষ্ট কর? এনে দিলে সুসার হয়। তোমার খরচ কি? বাজে খরচ কবে নষ্ট কর বৈত নয়। যা স্বভাব তোমার, জানি তো। হাতে টাকা এলে আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে গলে যায়। এবার থেকে আমায় এনে দিও, তোমার যা দরকার হবে চেয়ে নিও—আর কটা মাস মোটে, ধারটা শোধ হয়ে গেলে তখন কি আর টানাটানি থাকবে? না তুমি দশ বিশ টাকা বাজে খরচ করলে এসে যাবে?

 শ্যামা বলে, শীতল শোনে। শ্যামাকে বোধ হয় সে আরর একজনের সঙ্গে মিলাইয়া দেখে, যে এমনি মিষ্টি মিষ্টি কথা বলিয়া বুঝাইয়া টাকা আদায় করিত। বলিত, আমায় দু’খানা গয়না গড়িয়ে দে, টাকাটা তাহলে আটকা থাকবে। নইলে তুই তো সব খরচ কবে ফেলবি! দরকারের সময় তুই তোর গয়না বেচে নিস, আমি যদি একটি কথা কই—

 সে এসব বলিত মদেব মুখে। শ্যামা কিন্তু—

 তারপর শ্যামা বলে, এ কাপড় তো পরতে পারব না আমি ছেলের সামনে। ও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে, আমার লজ্জা কববে বাবু। না পরতে পার, ওই নর্দমা রয়েছে ওখানে ফেলে দাও।—শীতল বলে।

 রাত্রে ছেলেমেয়েরা সব ঘুমাইয়া পড়িলে শ্যামা আস্তে আস্তে শীতলকে