পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
৬১

সময় পাইল না। আজ তাহার এত তাড়াতাড়ি কিসের সেই জানে, বাড়িতে একটা মানুষ আসিলে শীতল যেন কি রকম করে, সে যেন চোর পুলিস। তাহার খোঁজ করিতে আসিয়াছে।

 রাঁধিতে রাঁধিতে শ্যামা কত কি যে ভাবিতে লাগিল। মামার সঙ্গিনীটির কি হইয়াছে? হয়ত মরিয়া গিয়াছে, নয়ত মামার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হইয়াছে অনেকদিন আগেই। ওসব সম্পর্ক আর কতকাল টেঁকে? মরুক, ওসব দিয়া তার কি দরকার? কেলেঙ্কারি ব্যাপার চুকাইয়া দিয়া মামা ফিরিয়া আসিয়াছে এই তার ঢের। আচ্ছা, এতকাল মামা কি করিতেছিল? টাকা-পয়সা কিছু সঞ্চয় করিয়াছে নাকি? তা যদি করিয়া আসিয়া থাকে তবে মন্দ হয় না। মামার সম্পত্তি হাতছাড়া হইয়া যাওয়ায় শীতলের মনে বড় লাগিয়াছিল, মামা হয়ত এবার সুদে-আসলে সে পাওনা মিটাইয়া দিবে? পুরুষমানুষের ভাগ্য,—বিদেশে ধূলিমুঠা ধরিয়া মামার হয়ত সােনামুঠা হইয়াছে, মামার কাপড়জামা দেখিলেও তাই মনে হয়। মামার তাে আর কেউ নাই, যদি কিছু সঞ্চয় করিয়া থাকে শ্যামাই তাহা পাইবে। এই বয়সে আর একজন সঙ্গিনী জুটাইয়া মামা আর তাহার দেশান্তরী হইতে যাইবে না!

 মামাকে সে ঘরবাড়ি দেখায়। পিছনে খিড়কির দিকে খানিকটা খালি জায়গা আছে, কয়েক হাজার ইট কিনিয়া শ্যামা সেখানে জমা করিয়া রাখিয়াছে, রান্নাঘরের পাশে সিঁড়ির নিচে, চুন আর সুরকি রাখিয়াছে,—আর বছর শ্যামা যে টাকা জমাইয়াছিল এসব কিনিতেই তা খরচ হইয়া গিয়াছিল, এ-বছর কিছু টাকা জমিয়াছে, ভগবানের ইচ্ছা থাকিলে আগামী মাঘে দোতালায় শ্যামা একখানা ঘর তুলিবে।

 এইটুকু বাড়ি, দুখানা মােটে শােবার ঘর, কেউ এলে কোথায় থাকতে দেব ভেবে পাইনে মামা, দোতলায় ঘরটা তুলতে পারলে বাঁচি, ও আমার অনেকদিনের সাধ। খোকার বিয়ে দিয়ে ছেলে-বৌকে ও-ঘরে শুতে দেব। পাশ দিতে খোকার আর চার বছর বাকি, পােষ মাসে কেলাসে উঠলে তিন বছর, নারে খোকা?

 মামা গম্ভীর হইয়া বলে, বড় বুদ্ধি তাের ছেলের শ্যামা, মস্ত বিদ্বান্