পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
৬৭

আছে নিজের। ভগ্নীপতি চাইলে, দিয়ে দিলে তাকে হাজারখানেক টাকা ধার করে—না একবার জিজ্ঞেস করা, না একটা পরামর্শ চাওয়া! তাও মেনে নিলাম মামা, ভাবলাম দিয়ে যখন ফেলেছে আর তো উপায় নেই—যে মানুষে ওর ভগ্নীপতি ও টাকা ফিরে পাওয়ার আশা নিমাই!—কি আর হবে? এই সব ভেবে জমানো যে কটা টাকা ছিল,—কি কষ্টে যে টাকা কটা জমিরেছিলাম মামা ভাবলে গা এলিয়ে আসে—দিলাম একদিন সবগুলি টাকা হাতে তুলে, বললাম, যাও ধার শুধে এসো, ঋণী হয়ে থেকে কেন ভেবে ভেবে গায়ের রক্ত জল করা? টাকা নিয়ে সেই যে গেল, ফিরে এল সাদ্দিন পরে। ধারের মনে ধার রইল, টাকাগুলো দিয়ে বাবু সাদ্দিন ফূর্তি করে এলেন! সেই থেকে কেমন যেন দমে গেছি মামা কোন দিকে উৎসাহ পাইনে। ভাবি, এই মানষকে নিয়ে তো সংসার, এত যে করি আমি কি দাম তার, কেন মিথ্যে মবছি খেটে খেটে,—সুখ কোথা অদেষ্টে?

 মামা সান্ত্বনা দিয়া বলে, পুরুষমানুষ অমন একটু আধটু করে শ্যামা—নিজেই আবার সব ঠিক করে আনে। আনছে তো বাবু রোজগার করে, বসে তো নেই!

 শ্যামা বলে, আমি আছি বলে, আর কেউ হলে এ সংসার কবে ভেসে যেত মামা।

 মামা একদিন কোথা হইতে শ্যামাকে কুড়িটা টাকা আনিয়া দেয়। শ্যামা বলে, একি মামা?

 মামা বলে, রাখ না, রাখ—খরচ করিস্। টাকাটা পেলাম, আমি আর কি করব ও দিয়ে?

 সত্যই তো, টাকা দিয়া মামা কি করিবে? শ্যামা সুখী হইল। মামা যদি মাঝে মাঝে এরকম দশবিশটা টাকা আনিয়া দেয় তবে মন্দ হয় না। মামাকে শ্যামা ভক্তি করে, কাছে রাখিয়া শেষ বয়সে তাহার সেবাযত্ন করার ইচ্ছাটাও আন্তরিক। তবে, তাহার কিনা টানাটানির সংসার, ইঁটসুরকি কিনিয়া রাখিয়া টাকার অভাবে সে কি না দোতালায় ঘর তোলা আরম্ভ করিতে পারে নাই, মেয়ে কিনা তাহার বড় হইতেছে, টাকার কথাটা সে তাই আগে ভাবে। কি করিবে সে? তার তো জমিদারি নাই। মামা থাক, হাজার