পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৮
জননী

দশ হাজার যদি নাই পাওয়া যায়, মামার জন্য যে বাড়তি খরচ হইবে অন্তত সেটা আসুক, শ্যামা আর কিছু চায় না।

 দিন পনের পরে মামা একদিন বর্ধমানে গেল, সেখানে তাহার পরিচিত কোন সাধুর আশ্রম আছে, তার সঙ্গে দেখা করিবে। বলিয়া গেল দিন তিনেক পরে ফিরিয়া আসিবে। শ্যামা ভাবিল, মামা বোধ হয় আর ফিরিয়া আসিবে না, এমনি ভাবে ফাঁকি দিয়া বিদায় লইয়াছে। শীতল ক্ষুণ্ণ হইল সব চেয়ে বেশি। বন্ধনহীন নির্বান্ধব ভ্রাম্যমান লোকটির প্রতি সে প্রবল একটা আকর্ষণ অনুভব করিতেছিল। মামা যখন যায়, শীতল বাড়ি ছিল না। মামা চলিয়া গিয়াছে শুনিয়া সে বারবার বলিতে লাগিল, কেন যেতে দিলে? তোমার ঘটে একফোঁটা বুদ্ধি নেই, মামার স্বভাব জানো ভাল করে, আটকাতে পারলে না? বোকা হাঁদারাম তুমি—মুখ্যুর একশেষ!

 কচি খোকা নাকি ধরে রাখব?

 ধরে আবার রাখতে হয় নাকি মানুষকে? কি বলেছ কি করেছ তুমিই জান, যা ছোট মন তোমার, আত্মীয়স্বজন দুদিন এসে থাকলে খরচের ভয়ে মাথার তোমার টনক নড়ে যায়,—ছেলেমেয়ে ছাড়া জগতে যেন পোষ্য থাকে না মানুষের।—ছেলে তোমার কি করে দেখো, তোমার কাছেই তো সব শিখছে, তোমার কপালে ঢের দুঃখ আছে।

 পাগল হলে নাকি তুমি? কি বকছ?

 শীতল যেন কেমন করিয়া শ্যামার দিকে তাকায়। খুব রাগিলে আগে যেমন করিয়া তাকাইত সেরকম নয়।—পাগল আমি হইনি শ্যামা, হয়েছ তুমি। ছেলে ছেলে করে তুমি এমন হয়ে গেছ, তোমার সঙ্গে মানুষে বাস করতে পারে না,—ছেলে না কচু, সব তোমার টাকার খাঁকতি, কি করে বড়লোক হবে দিনরাত শুধু তাই ভাবছ, কারো দিকে তাকাবার তোমার সময় নেই। জন্তুর মত হয়েছ তুমি, তোমার সঙ্গে একদণ্ড কথা কইলে মানুষের ঘেন্না জন্মে যায় এমনি বিশ্রী স্বভাব হয়েছে তোমার, লোকে মরুক বাঁচুক তোমার কি? সময়ে মানুষ টাকা পয়সার কথা ভাবে আবার সময়ে দশজনের দিকে তাকায়, তোমার তা নেই,—আমি বুঝিনে কিছু! টাকার কথা ছাড়া এক মিনিট আমার সঙ্গে অন্য কথা কইতে তোমার গায়ে জ্বর আসে, মন খুলে স্বামীর