পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
৭১

পোয়াবে? যা সব বজ্জাত মিস্ত্রি, বজ্জাতি করে মালমশলা নষ্ট করবে, তুমি ওদের সঙ্গে পারবে কেন? তাছাড়া, নিজের চোখে না দেখে আমার স্বস্তি নেই কাজ কতদূর এগুলো— ঘর তোলার সাধ কি আমার আজকের! তুমি ঘরে গিয়ে বোসো মামা,—পিঠে কোথায় ব্যথা বলছিলে না? রাণী বরং একটু তেল মালিশ করে দিক।

 শীতল কোন দিকে নজর দেয় না, কেবল সে যে পুরুষ মানুষ এবং বাড়ির কর্তা এটুকু দেখাইবার জন্য বলা নাই কওয়া নাই মাঝে মাঝে কর্তৃত্ব ফলাইতে যায়। গম্ভীর মুখে বলে, এখানে জানালা হবে বুঝি, দেয়ালের যেখানে ফাঁক রাখছ?

 মিস্ত্রিরা মুখ টিপিয়া হাসে। শ্যামা বলে, জানালা হবে না ত কি দেয়ালে ফাঁক থাকবে?

 তাই বলছি—শীতল বলে,—জানালা হবে কটা? তিনটে মোটে? না, না তিনটে জানালায় আলো বাতাস খেলবে না ভাল,—ওহে মিস্ত্রি এইখানে আরেকটা জানালা ফুটিয়ে দাও,—এদিকে একটাও জানালা করনি দেখছি।

 শ্যামা বলে, ওদিকে জানালা হবে না, ওদিকে নকুড়বাবুর বাড়ি দেখছ না? আর বছর ওরাও দোতালায় ঘর তুলবে, আমাদের ঘেঁষে ওদের দেয়াল উঠবে,—জানালা দিয়ে তখন করবে কি? জান না বোঝ না ফোঁপরদালালি কোরো না বাবু তুমি।

 শীতল অপমান বোধ করে, কিন্তু যেন অপমান বোধ করে নাই এমনি ভাবে বলে, তা কে জানে ওরা আবাব ঘর তুলবে!—হাঁ হাঁ, ওখানে আস্ত ইঁট দিও না মিস্ত্রি, দেখছ না বসছে না, কতখানি ফাঁক রয়ে গেল ভেতরে? দুখানা আদ্ধেক ইঁট দাও, দিয়ে মাঝখানে একটা সিকি ইঁট দাও।

 মিস্ত্রিরা কথা বলে না, মাঝখানের ফাঁকটাতে কয়েকটা ইঁটের কুচি দিয়া মশলা ঢালিয়া দেয়, শীতল আড়চোখে চাহিয়া দেখে শ্যামা ক্রুর চোখে চাহিয়া আছে। শীতল এদিকে ওদিকে তাকায়, হঠাৎ শ্যামার দিকে চাহিয়া একটু হাসে, পরক্ষণে গম্ভীর হইয়া নিচে নামিয়া আসে। দাঁড়াইয়া বিধানের একটু পড়া দেখে,—পড়িবার জন্য ছেলেকে শ্যামা গত বৈশাখ মাসে নতুন টেবিল চেয়ার কিনিয়া দিয়াছে,—পড়া দেখিতে দেখিতে শীতল টের পায়