দিতে গেল, বকুল দাঁত কামড়াইয়া রহিল, তার মুখ শুধু মাখা হইয়া গেল পায়সে।
হার মানিয়া শ্যামা অভিমানাহত কণ্ঠে বলিল, উঃ, কি জিদ মেয়ের! কিছুতে পারলাম না খাওয়াতে?
দুটোর আগে শীতল সত্য সত্যই ফিরিয়া আসিল। শ্যামা আসন পাতিয়া গেলাসে জল ভরিয়া দিল। ভাবিল শীতল খাইতে বসিলে সবিস্তারে বকুলের জিদের গল্প করিবে। কিন্তু ঘরের মধ্যে বাপ-বেটিতে কি পরামর্শই যে দুজনে তাহারা করিল, খানিক পরে মেয়ের হাত ধরিয়া শীতল বাড়ির বাহির হইয়া গেল। যাওয়ার আগে শ্যামার সঙ্গে তাহাদের যে কথা হইল তাহা এই।
শ্যামা বলিল, কোথায় যাচ্ছ শুনি?
শীতল বলিল, চুলোয়।
শ্যামা বলিল, পায়েস খেয়ে যাও।
বকুল বলিল, তোমার পায়েস আমরা খাইনে।
শ্যামা বলিল, দেখো, ভাল করছ না কিন্তু তুমি। আদর দিয়ে দিয়ে মেয়ের তো মাথা খেলে।
এর জবাবে শীতল বা বকুল কেহই কিছু বলিল না। পা দিয়া পায়সের বাটি উঠানে ছুঁড়িয়া দিয়া শ্যামা ফেলিল কাঁদিয়া।
রাত প্রায় নটার সময় দুজনে ফিরিয়া আসিল। বকুলের গায়ে নতুন জামা, পরণে নতুন কাপড়, দু-হাত বোঝাই খেলনা, আনন্দে বকুল প্রায় পাগল। আজ কিছুক্ষণের জন্য সকলের সঙ্গেই সে ভাব করিল, শ্যামার অপরাধও মনে রাখিল না, মহোৎসাহে সকলকে সে তাহার সম্পত্তি দেখাইল, বাবার সঙ্গে কোথায় কোথায় গিয়াছিল গল গল করিয়া বলিয়া গেল।
শীতল উৎসাহ দিয়া বলিল, কি খেয়েছিস বললি না বকু?
পরদিন রাত্রে প্রেস হইতে ফিরিয়া বকুলকে শীতল দেখিতে পাইল না। শ্যামা বলিল, মামার সঙ্গে সে বনগাঁয়ে পিসির কাছে বেড়াইতে গিয়াছে।
আমায় না বলে পাঠালে কেন?