পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
৯৪

পাড়াতে, একেবারে কুমীদের বাড়ির সামনেই এসে পড়েচে। সেই জিউলি গাছটা, এই গাছটাতে একবার সাপ উঠে পাখীর ছানা খাচ্ছিল, কুমী তাকে ছুটে গিয়ে খবর দিতে, সে এসে সাপ তাড়িয়ে দেবার জন্য ঢিল ছোঁড়াছুঁড়ি করে। এ পাড়ার গাছে পালায়, ঘাসের পাতায়, সন্ধ্যার ছায়ায়, শাঁখের ডাকে কুমী মাখানো। এই রকম সন্ধ্যায় কুমীদের বাড়ি বসে সে কত গল্প করেচে কুমীর সঙ্গে!

 চুপ করে সে জিউলিতলায় খানিকটা দাড়িয়ে রইল।···

 তার সামনের পথটা দিয়ে তেইশ চব্বিশ বছরের একটি মেয়ে দুটো গরুর দড়ি ধরে নিয়ে আসচে! কুমীদের বাড়ির কাছে বাঁশতলাটায় যখন এল, তখন হীরু চিনতে পারলে সে কুমী।

 প্রথমটা সে যেন অবাক্ হয়ে গেল···আড়ষ্টের মতো দাঁড়িয়ে রইল সত্যই কুমী? এমন অপ্রত্যাশিতভাবে একেবারে তার চোখের সামনে! কুমীই বটে, কিন্তু কত বড় হয়ে গিয়েছে সে! হঠাৎ হীরু এগিয়ে গিয়ে বললে—কুমী কেমন আছ? চিনতে পারো?

 কুমী চমকে উঠল, অন্ধকারে বোধ হয় ভাল করে চিনতে পারলে না, বললে—কে?

 —আমি হীরু।

 কুমী অবাক্ হয়ে দাড়িয়ে রইল। কিছুক্ষণ তার মুখ দিয়ে কথা বার হ’ল না। তারপর এসে পায়ের ধুলো নিয়ে প্রণাম করে হীরুর মুখের দিকে চেয়ে বললে—কবে এলে হীরুদা? কোথায় ছিলে এতকাল? সেই জামালপুরে?

 —আজই দুপুরে এসেছি।