পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
৯৬

সন্দেটা দেখিয়ে খোলা চড়িয়ে গরম গরম ভেজে দিই। ছোলাও আছে, নারকোলও আছে। দাঁড়াও, আগে পিদিমটা জ্বালি।

 সেই মাটির ঘর সেই রকমই আছে। সেই কুমী সন্ধ্যাপ্রদীপ দিচ্চে পুরোনো দিনের মতো, যখন সে কত রাত পর্যন্ত ওদের বাড়ি বসে গল্প করতো। তবুও কত—কত পরিবর্তন হয়ে গিয়েচে! কত ব্যবধান এখন তার আর কুমীর মধ্যে।

 কুমী প্রদীপ দেখিয়ে চাল ভাজতে বসল। একটু পরে ওকে খেতে দিয়ে সামনে বসল সেই পুরোনো দিনের মতোই গল্প করতে। সেই হাত-পা নাড়া, সেই বকুনি—সবই সেই। কত কথা বলে গেল। হীরু ওর দিকে চেয়ে থাকে, চোখ আর অন্য দিকে ফেরাতে পারে না। কুমীও তাই।

 হীরু বললে—ইয়ে, কোথায় বিয়ে হ’ল কুমী?

 কুমী লজ্জায় চোখ নামিয়ে বললে—সামটা।

 —তা বেশ।

 তারপর কুমী বললে, ক’দিন থাকবে এখন হীরুদা?

 —থাকবার যো নেই, কাজ ফেলে এসেছি, পিসিমাকে নিয়ে কালই যাব। পিসিমা চিঠি লিখেছিলেন বলেই তো তাঁকে নিতে এলাম।

 —না, না হীরুদা, সে কি হয়? কাল ভাদ্র মাসের লক্ষ্মীপুজো, কাল কোথায় যাবে? থাকো এখন দু’দিন। কতকাল পরে এলে। তুমিও তো বিয়ে করেচ, বৌদিকে নিয়ে এলে না কেন? দেখতাম। ছেলেমেয়ে কি?

 —দুটি ছেলে একটি মেয়ে।