পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যদু হাজরা ও শিখিধ্বজ 

কেরানীবাবু ও পোস্ট মাস্টারবাবুদের যত্ন করে বসাতে সবাই মহা ব্যস্ত।

 যাত্রা আরম্ভ হ'ল। নল-দময়ন্তীর পালা। একটু পরেই যদু হাজরা “নল" সেজে আসরে ঢুকতেই—তখন হাততালির রেওয়াজ ছিল না—চারিদিকে হরিধ্বনি উঠল। অত বড় আসর মন্ত্রমুগ্ধবৎ স্থির ও নীরব হ'য়ে গেল।

 আমি যদু হাজরার নাম কখনো এর আগে শুনিনি, এই প্রথম শুনলুম। মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলুম, শ্যামবর্ণ, সুপুরুষ—বয়স তখন বুঝবার ক্ষমতা হয়নি, ত্রিশও হ'তে পারে, পঞ্চাশও হ'তে পারে। কিন্তু কি কথা বলবার ভঙ্গি, কি চোখ মুখের ভাব, কি হাত পা নাড়ার ঢং। আমার এগারো বৎসরের জীবনে আর কখনো অমনটি দেখিনি। ভিড়ের কষ্ট ভুলে গেলুম, কিছু খেয়ে বেরুই নি, খিদেতে পেটের মধ্যে যেন বোল্‌তায় হুল ফোটাচ্ছে—সে কথা ভুললুম—যাত্রা থেমে গেলে এত রাত্রে এক অজানা স্থানে শীতে কোথায় যাব—সে সব কথাও ভুলে গেলুম—পঞ্চ দেবতা পঞ্চ নলরূপে দময়ন্তীর স্বয়ম্বর সভায় এসে বসেছেন, আসল “নল"-রূপী যদু হাজরা বিস্ময়বিহ্বল দৃষ্টিতে চারদিক চেয়ে বলছেন—

এ কি হেরি চৌদিকে আমার—
মম সম রূপ নল চতুষ্টয়
মম সম সাজে সাজি বসিয়াছে
সভা মাঝে।
বুঝিতে না পারি কিবা মায়াজাল
ইষ্টদেব,
পুরাও বাসনা মোর, মায়া জাল ফেল ছিন্ন করি।