পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৯
লেখক 

যেমন আগ্রহের সঙ্গে এ-সব কথা পড়েছে, তাতে বেশ বুঝা যায়, অনেক দিন পরে একটু উচ্চ বিষয়ে চর্চা করতে পেরে ও খুব খুশি। হয়তো এমন শ্রোতা ওর অনেকদিন জোটে নি।

 এ অবস্থায় তাকে নিরুৎসাহ করতে না পেরে রামচন্দ্র সরকার সম্বন্ধে একটা কাল্পনিক মত দেবার চেষ্টা করলুম। আমার কথা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে শুনলে। বললে, আপনি ঠিক বলেছেন। আমার কি মনে হয় জানেন? ইবসেন বলেছেন—তারপর সে খানিকক্ষণ ধরে ইবসেন, মেটারলিঙ্ক, রবীন্দ্রনাথ প্রভৃতি অনেক নাম অনর্গল আবৃত্তি ক’রে, তাদের নানা মত উদ্ধৃত করে নিজের একটা যুক্তি প্রতিষ্ঠিত করবার চেষ্টা করলে—তার ভাবে মনে হল এ ধরনের কথা বলতেও সে বিশেষ আনন্দ পাচ্ছে—কথা বলতে বলতে আমার মুখের দিকে চেয়ে দেখে—বোধ হয় আমার মুখের ভাব দেখে বোঝবার চেষ্টা করে আমি তার তর্কের ক্ষমতা, পাণ্ডিত্য ও যুক্তির সারবত্তা সম্বন্ধে কি ভাবচি।

 আমি বললাম, এখানে কত দেয় আপনাকে?

 —ঊনত্রিশ টাকা। এখন একরকম কুলিয়ে যায়, দাদার বাসাতে থাকি। কিন্তু দাদা বদলি হ’য়ে গেলে তখন মুশকিল হবে। আমার বাড়িতে কিছু না দিলে তো চলবেই না—

 কেন, আপনার দাদারা রয়েছেন?

 আমার আপনার দাদা কেউ নেই। এঁরা সব খুড়তুতো জ্যেঠতুতো ভাই। আমার বাবা অন্ধ, আমি তাঁর একমাত্র ছেলে, আর একটি বোন, আমার ছোট, তার এখনও বিয়ে হয়নি। দাদারা সব যে যার পৃথক। এক বাড়িতে থাকলেও এক অন্নে নেই।