পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
১১৮

করার কোনো উপায় নাই। একশো টাকার নোটগুলি ভাঙ্গাইয়া ফেলিতে হইবে। সিরাজগঞ্জে তাহার মামা পাটের আপিসে কাজ করেন, মামার সাহায্যে একশো টাকার নোট ভাঙ্গাইয়া খুচরা দশ টাকার নোট সংগ্রহ করিতে হইবে। কালই সকালের ট্রেণে সিরাজগঞ্জ রওনা হওয়া দরকার।

 হরিপদর স্ত্রী আশালতা নোটের তাড়া দেখিয়া অবাক্ হইয়া স্বামীর দিকে চাহিয়া রহিল। বলিল—হ্যাঁগা, তারা বুঝতে পারলে না, ভুল ক’রে কার টাকা কাকে দিলে!

 বড় বড় আপিসের মজাই তো তাই। বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো। এদিকে এক এক ডিপার্টমেণ্টে পঞ্চাশ ষাট একশো লোক খাটছে, আর ওদিকে এই কাণ্ড। বড়বাবুর কাছে যাও, বিল সই করে নিয়ে এসো, ক্যাশ লও, আবার সই করাও। সব মিথ্যে জাঁকজমক আর কেতাদুরস্ত।

 আশালতা বলিল, কিন্তু ওসব নোটের শুনেচি নম্বর থাকে, যদি পুলিশে হুলিয়া করে দেয়, তুমি নোট ভাঙ্গাবে কি করে? ওইখানেই তো ভয়!

 কিছু ভয় নেই। প্রথম তো আজকাল একশো টাকার নোটে নম্বর থাকে না শুনেচি। অত বড় আপিসে একশো টাকার যে সাধারণ নম্বর থাকে, তা টুকে রাখবে না। আর তা ছাড়া কালই সিরাজগঞ্জে গিয়ে মামার কাছ থেকে সব নোট ভাঙ্গিয়ে আনচি। আমার ঠিকানা ওদের কাছ নেই যে ধরবে। নাম দেখে ধরতে পারবে না।

 হরিপদর স্ত্রী বলিল—ভালোয় ভালোয় নোটগুলো ভাঙ্গিয়ে তো আনো। সামনের পুন্নিমের দিন সত্যনারায়ণের শিন্নি দিয়ে দিই। ও টাকা ভগবান আমাদের মুখ চেয়েই দিয়েছেন।