পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
১২০

 টাকা ফেরত দেওয়ার একটা প্রধান বাধা দাঁড়াইয়াছে হরিপদর স্ত্রী। সে যেদিন হইতে শুনিয়াছে স্বামী টাকা ফেরত দেওয়ার সংকল্প করিতেছে, সেদিন হইতে সে কাঁদিয়া কাটিয়া অনর্থ বাধাইয়াছে। গরীবের ঘরের মেয়ে, গরীরের ঘরের বৌ—তার কাছে এগারোশো টাকা একটা খুব বড় ব্যাপার।

 হরিপদ তাহাকে বুঝাইয়া বলিল—দ্যাখো, ফাঁকির টাকা তো বটে! এতদিন কথাটা ভালো করে বুঝিনি, আজকাল রাত্রে আমার ঘুম হয় না ভেবে ভেবে তা জানো? কাজ নেই বাপু, এগারোশো টাকা ক’দিন খাব? ওটা তাদের দিয়েই আসি।

 আশালতা বলিল—ফাঁকির টাকা হ’ল কি ক’রে? ভগবান না দিলে তাদেরই বা ভুল হবে কেন? ও যখন ঘরে এসেছে, তখন হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলো না, আমার কথা শোনো, ও নিয়ে ভেবে মিথ্যে মাথা খারাপ কোরো না লক্ষ্মীটি। তুমি কোন একটা লোককে ফাঁকি দিয়ে নিয়ে আসোনি, তারা ভুল করে দিয়েচে, এতে তোমার দোষ কি? কারো একজনের টাকা নয়, কোম্পানীর টাকা, বড় লোক কোম্পানী, তাদের কাছে এগারোশো টাকা কিছুই নয়, কিন্তু আমাদের কাছে অনেক বেশি। সারা জীবনের একটা হিল্লে হয়ে যাবে। আমি কি আমার নিজের জন্যেই বলি, নিজের চেহারাটা একবার আয়নায় দেখো। দিকি? বনে-জঙ্গলে ঘুরে গাছপালা খুঁজে খুঁজে কি ছিরি বেরিয়েছে! ওই টাকায় একখানা দোকান করো, বসে চলবে।

 কি ভয়ানক বাধা হইয়া উঠিয়াছে স্ত্রীর এই অনুরোধ! কেন ছাই এ কথা ও স্ত্রীকে বলিতে গিয়াছিল? ওর মুখের