পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
১২৪

সেটা পুরিয়ে দাও গিয়ে। ওই টাকা যেদিন থেকে ঘরে ঢুকেচে, সেদিন থেকে সংসারের শান্তি চলে গিয়েচে, ও আর কিছুদিন থাকলে একেবারে সর্বনাশ হয়ে যাবে। তুমি কাল যাও, টাকা ফেলে দিয়ে এসো গিয়ে।

 রাত্রিটা কাটিয়া গেলে হরিপদ দেখিল, প্রায় একশো টাকা আন্দাজ খরচ হইয়া গিয়াছে সেই টাকা হইতে। স্ত্রীর গহনা লইয়া সেদিনই সে কলিকাতা রওনা হইল এবং পোদ্দারের দোকানে বেচিয়া টাকাটা সংগ্রহ করিল। কোম্পানীর আপিসে গিয়া ভাবিল, কোনো ছুটো কেরানীর কাছে টাকাটা দেব না,—হিসেবের বাহিরের টাকা সে মেরে দেবে। সে একেবারে সরাসরি বড়বাবুর ঘরে গিয়া হাজির হইল।

 বড়বাবু বলিলেন, কি চাই?

 হরিপদ সব খুলিয়া বলিল। ঘরে আর কেহ ছিল না। বড়বাবু আশ্চর্য হইয়া গেলেন। এই টাকা লইয়া আপিসে যথেষ্ট গোলমাল হইয়া গিয়াছে। হরিপদ যাইবার দু’দিন পরে ভুল ধরা পড়ে। তাহাকে খুঁজিয়া বাহির করিবার যথেষ্ট চেষ্টা করা হইয়াছিল, কিন্তু পারা যায় নাই। যে কেরানী ভুল করিয়াছিল, তাহার মাহিনা হইতে প্রতি মাসে ত্রিশ টাকা করিয়া কাটিয়া লওয়া হইতেছে এবং পূজার বোনাস্ সে কখনো পাইবে না, এই বন্দোবস্ত হইয়াছিল।

 আজ দু’মাস আড়াই মাস পরে সেই পলাতক লোকটি টাকা ফেরত দিতে আসিয়াছে। ব্যাপারখানা কি? বড়বাবু এমন কাণ্ড কখনো তাঁহার বাহান্ন বছর বয়সে দেখেন নাই।

 জিজ্ঞাসা করিলেন, পুরো টাকাই দেবেন তো? নিয়ে এসেচেন সব? তা এতদিন আসেন নি কেন? হরিপদ বলিল,