পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৫
বড়বাবুর বাহাদুরি 

যখন টাকাটা এখান থেকে নিয়ে গেলুম, তখন বুঝতে পারিনি যে এত টাকা নিয়ে যাচ্ছি। ধরা পড়ল অনেক পরে বাড়ি গিয়ে। তারপর লোভ প্রবল হয়ে উঠল বড়বাবু, আমরা গরীব লোক, এতগুলো টাকার লোভ সামলানো সোজা কথা তো নয়!

 বড়বাবু বলিলেন—বেশ, টাকা দিয়ে যান।

 টাকা গুনিয়া দিয়া হরিপদ চলিয়া গেল। আপিসে ইতিমধ্যে অনেকেই কথাটা শুনিয়াছে, তাহারা বড়বাবুর কাছে কথাটা শুনিতে আসিল। এতদিন পরে টাকা ফেরত দিতে আসিল কি ব্যাপার?

 বড়বাবু মৃদু হাসিয়া বলিলেন—হুঁ-হুঁ—তোমরা তো জানো না। কোম্পানীর জন্যে কত খেটে মরি, নামও নেই এ আপিসে, যশও নেই। বাছাধন আজ এতকাল পরে এসেচেন বোধ হয় মাল বিক্রি করতে। ভেবেচেন এতদিনে আর চিনতে পারবে না। জিজ্ঞেস করলুম, আপনার নামটি কি? আপনি একবার জিনিস বেচতে এসে বেশি পেমেণ্ট নিয়ে গিয়েছিলেন না? আমি ওকে বিল সই করতে দেখেচি—চেহারা দেখেই ভাবলুম, এ ঠিক সেই লোক। যেমন বলেচি, বাছাধনের মুখটি চুন। বললুম, টাকা ফেলো, নইলে পুলিশে দেব। ব্যবসাদার লোক, পাওনা টাকা আদায় করেছিল বোধ হয়। সঙ্গে টাকাও ছিল, তা থেকে ভয়ে ভয়ে আমাদের টাকাটা বে’র করে দিলে। যাবে কোথায়? কত বড় ফাঁদে পা দিয়েছে, জানে না।

 বড়বাবুর জয় জয়কার পড়িয়া গেল।