রাতের দিকে যখন খোকার হিক্কা আরম্ভ হইল, খোকার মা বলিল—ওগো, খোকার হিক্কা উঠেচে, একটু ডাবের জল দিলে হিক্কাটা সেরে যাবে এখন।
জল দেওয়া হইল, হিচ্কী ক্রমশই বৃদ্ধি পাইতে লাগিল, কমিবার নামটিও করে না। অতটুকু কচি বালকের সে কি ভীষণ কষ্ট! এক একবার হিচ্কী তুলিতে তার ক্ষুদ্র দুর্বল বুকখানা যেন ফাটিয়া যাইতেছে। আর তার কষ্ট দেখা যায় না, তখন কেশবের মনে হইতেছিল, “হে ভগবান্! তুমি হয় ওর রোগ সারিয়ে দাও, নয় তো ওকে নাও, তোমার চরণে স্থান দাও, কচি ছেলের এ কষ্ট চোখের ওপর আর দেখতে পারি নে।”
সূর্য উঠিবার পূর্বেই খোকা মারা গেল ৷
কেশবের স্ত্রী কাঁদিয়া উঠিতেই পাশের বাড়ি হইতে প্রৌঢ়া বাঁড়ুয্যে-গিন্নি ছুটিয়া আসিলেন। তাঁর সঙ্গে তাঁর তিন মেয়ে আসিল। সামনের বাড়ির নববিবাহিতা বধূটিও আসিল। বধূটি বেশ, আজ মাস-দুই বিবাহ হইয়াছে, কিন্তু খোকার অসুখের সময় দুবেলা দেখা শোনা করা, রোগীর কাছে বসিয়া খোকার মাকে স্নানাহারের অবকাশ দেওয়া, নিজের বাড়ি হইতে খাবার করিয়া আনিয়া খোকার মাকে খাওয়ান—ছেলেমানুষ বৌয়ের কাণ্ড দেখিয়া সবাই অবাক্। এখন সে আসিয়া কাঁদিয়া আকুল হইল। বড় নরম মনটা।
দশ মাসের ছেলে মোটে। শ্মশানে লইয়া যাইবার প্রয়োজন নাই।
খোকাকে কাঁথা জড়াইয়া কেশব আগে আগে চলিল, তার সঙ্গে পাড়ার আরও তিন-চারজন লোক। ঘন বাঁশ বাগান