পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৯
অন্নপ্রাশন 

 কাজটা সাঙ্গ হইয়া গেল খুব সকালেই। বাড়ি যখন ইহার। ফিরিল, তখন সবে রৌদ্র উঠিয়াছে।

 একটু পরে সান্ন্যাল-বাড়ি হইতে লোক আসিল কেশবকে ডাকিতে। বলিল—আসুন মুহুরী মশায়, বাবু ডাকচেন। তিনি সব শুনেচেন, কাজকর্ম করলে মনটাতে ভুলে থাকবেন, সেই জন্যে ডেকে নিয়ে যেতে বলে দিলেন।

 আজ সান্ন্যাল বাড়ির মেজবাবুর ছেলের অন্নপ্রাশন। সান্ন্যালেরা গ্রামের জমিদার না হলেও খুব সম্পন্ন গৃহস্থ বটে। পয়সাওয়ালা ও বর্ধিষ্ণু। এ অঞ্চলে প্রতিপত্তিও খুব। তেজারতিতেও ষাট সত্তর হাজার টাকা খাটে। পাশাপাশি আট দশখানা গ্রামে এমন চাষী প্রায় নাই, যে সান্ন্যালদের কাছে হাত পাতে নাই।

 কেশব বলিল, চল যাচ্ছি, ইয়ে···বাড়িতে একটু শান্ত করে যাই। মেয়েমানুষ, বড্ড কান্নাকাটি করচে।

 সান্ন্যালেরা লোক খুব ভাল। বৃদ্ধ সান্ন্যাল মশায় কেশবকে দেখিয়া বলিলেন, আরে এস, এস কেশব। আহা, শুনলাম সবই। তা কি করবে বল। ও দেবকুমার, শাপভ্রষ্ট হয়ে এসেছিল, কি রূপ, তোমার অদৃষ্টে থাকবে কেন? যেখানকার জিনিস সেখানে চলে গিয়েছে! তা ও আর ভেব না, কাজকর্মে থাক, তবুও অনেকটা অন্যমনস্ক থাকবে। দেখ গিয়ে বাড়ির মধ্যে ভাতের উনুনগুলো কাটা হচ্ছে কি না। বৌমাকেও আনতে পাঠাচ্চি, তিনিও এসে দেখাশুনো করুন, কাজের বাড়ি ব্যস্ত থাকবেন।

 মোটরে করিয়া একদল মেয়ে-পুরুষ কুটুম্ব আসিল।

 শহরের লোক। মেয়েদের গহনার বাহার নাই, সে সব বালাই