পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
১৩০

উঠিয়া গিয়াছে, শাড়ির রঙচঙে চোখ ধাঁধিয়া গেল। মেয়েরা ঠিকই কলিকাতার চাল শিখিয়া ফেলিয়াছে,—কিন্তু এ সব পাড়াগাঁয়ের শহরে পুরুষদের বেশভূষা নিজের নিজের ইচ্ছামত—ধুতির সঙ্গে কোট পরা এখানকার নিয়ম, কেউ তাতে কিছু মনে করে না।

 চারিধারে হাসিখুশি, উৎসবের ধূম। কেশবের মনের মধ্যে কোথায় যেন একটা প্রকাণ্ড বড় ফাঁকা, এদের হাসিখুশির সঙ্গে তার মিল খাইতেছে না। আচ্ছা, এদের মধ্যে কেউই বোধ হয় জানে না, তার আজ সকালে কি হইয়া গিয়াছে···

 একটি ভদ্রলোক চার বছবের একটি ছেলেকে সঙ্গে লইয়া গাড়ি হইতে নামিলেন। বেশ সুন্দর ফুটফুটে ছেলেটি, গায়ে রাঙা সিল্কের জামা, কোঁচান ধুতি পরনে এতটুকু ছেলের, পায়ে রাঙা মখমলের ওপর জরির কাজ করা জুতো। কি সুন্দর মানাইয়াছে।

 কেশবের ইচ্ছা হইল ছুটিয়া গিয়া ভদ্রলোকটিকে বলে—শুনুন মশায়, আমারও একটি ছেলে ছিল, অবিকল এমনটি দেখতে। আজ সকালে মারা গেল। আপনার ছেলের মতোই তার গায়ের রং।

 মহিমপুরের নিকারীরা মাছ আনিয়া ফেলিল। গোমস্তা নবীন সরকার ডাকিয়া বলিল—ওহে কেশব, চুপ করে দাঁড়িয়ে থেক না, চট্‌ করে মাছগুলোর ওজনটা একবার দেখে নিয়ে ওদের হাতচিঠেখানা সই করে দাও—দাঁড়িয়ে থাকবার সময় নেই—কাতলা আধ মনের বেশি হলে ফেরত দিও—শুধু রুইয়ের বায়না আছে।

 নবীন সরকার জানে না তাহার খোকা আজ সকালে মারা