পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৩
অন্নপ্রাশন 

হইতে সে এতই ব্যস্ত যে, কাকাদের বাড়ি গিয়া একবার দেখা করিয়া আসিতে পর্যন্ত পারে নাই।

 কেশব বলিল—কে ডাকে? কে, বিদ্যুৎ? কি বলচ মা? তা ওখানে দাঁড়িয়ে কেন?

 হারাণ চক্রবর্তীর মেয়েটির নাম বিদ্যুৎ। খুব সুন্দরী না হইলেও বিদ্যুতের রূপের চটক আছে সন্দেহ নাই, বয়স এই সবে ঊনিশ।

 বিদ্যুৎ ম্লানমুখে গলার সুমিষ্ট সুরে অনেকখানি খাঁটী মেয়েলী সহানুভূতি জানাইয়া বলিল—কাকা, খোকামণি না কি নেই? আমি সব শুনেছি সকালে। কিন্তু কোথাও বেরুতে পারিনি সকাল থেকে, একবার ভেবেছিলুম যাব।

 কেশব উত্তর দিতে গিয়া চাহিয়া দেখে বিদ্যুতের চোখ দিয়া জল পড়িতেছে। এতক্ষণ এই একটি লোকের নিকট হইতে সে সত্যকার সহানুভূতি পাইল। কেশব একবার গলা পরিষ্কার করিয়া বলিল—তা যা, এখানে দাঁড়িয়ে থাকিস্ নে—যা। ও ঘোঁটের কথা শুনে আর কি হবে, তুই বাড়ি যা। কুমার চক্কোত্তি রাগারাগি করে চলে গিয়েছে, ওকে সবাই গিয়েছে ফিরিয়ে আনতে। তোর ওপর খুব রাগ কুমারের। তবে ও ত আর সমাজের কর্তা নয়, ওর রাগে কি-ই বা এসে যাবে।

 —কি বলছিল ওরা?

 —তুই নাকি এখনও গাঙ্গুলী বাড়ি যাস্, তোকে ওদের টিউবকলে জল তুলতে যেতে দেখেছে কুমারের স্ত্রী। কোনদিন নাকি ওদের নারকোল তলায়—ইয়ে, সুশীলের সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলি, তাও কুমারের স্ত্রী দেখেছে—এই সব কথা।