পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যদু হাজরা ও শিখিধ্বজ 

 কিন্তু বন্ধু-বান্ধবেরা ছাড়লেন না। বারোয়ারীর কর্তৃপক্ষেরা বিশেষ বিশেষ অনুরোধ করে গেলেন—আমার যাওয়া চাই-ই। কি করি, ভদ্রতা বলেও তো একটা ব্যাপার আছে। খানিকটা দেখে না হয় উঠে এলেই হবে। নিতান্ত না যাওয়াটা ভালো দেখাবে না হয় তো-বিশেষ দেশে যখন তত বেশি যাতায়াত নেই।

 সন্ধ্যার সময় যাত্রা বসল। যাত্রা জিনিসটা দেখিনি অনেককাল-দেখে বুঝলুম সেকালের যাত্রা আর নেই। জুড়ীর গান, মেডেলধারী বেহালাদারদের দীর্ঘ কসরৎ-এ সব অতীত ইতিহাসে পরিণত হয়েছে। সলমা-চুমকীর কাজ করা সাজ পোশাকও আর নেই-ক’লকাতার থিয়েটারের হুবহু অনুকরণ যেমন সাজ-পোশাকে, তেমনি তরুণ অভিনেতাদের অভিনয়ের ঢঙ্গে। এমন কি কয়েকজন অভিনেতার ব’লবার ধরন, মুখভঙ্গি ও হাত-পা নাড়ার কায়দা, ক’লকাতার ষ্টেজের কোন কোন নামজাদা বিশিষ্ট অভিনেতার মতো। দেখলুম, আসরের শ্রোতার দলের মধ্যে যারা তরুণ বয়স্ক তাদের কাছে এরা পেলে ঘন ঘন হাততালি। কেউ কেউ বললে-ওঃ, কি চমৎকার নকলই করেছে ক'লকাতার ষ্টেজের অমুককে-বাস্তবিক দেখবার জিনিস বটে!

 এমন সময় আসরে ঢুকলো একজন মোটা কালো ও বেঁটে লোক। কিসের পার্টে তা আমার মনে নেই। লোকটির বয়স ষাটের উপর হবে, তবে স্বাস্থ্যটা ভালো। কেউ তার বেলা একটা হাততালিও দিলে না, যদিও সে দর্শকদের খুশি করবার জন্যে অনেক রকম মুখভঙ্গি করলে, অনেক হাত-পা নাড়লে। আমার সঙ্গে একদল স্কুলের ছেলে বসেছিল, তাদের মধ্যে একজন