পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
১৪২

কিন্তু এত রাত্রে জিনিসপত্র বেশি কিছু ছিল না। কেবল দই ও মিষ্টি এবং দু’তিন রকমের টক তরকারি দিয়া কেশব পরিতৃপ্তির সঙ্গে দুই জনের আহার একা করিল। পরে স্ত্রীকে লইয়া অন্ধকারেই নিজের বাড়ি রওনা হইল।

 কেশবের স্ত্রীও খুব খাইয়াছে। কেশবের প্রশ্নের উত্তরে বলিল—তা গিন্নীর বড় মেয়ে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে খাওয়ালে। নিজের হাতে আমার পাতে সন্দেশ দিয়ে গেল। খুব যত্ন করেছে। রান্নাবান্না কি চমৎকার হয়েছে, না?

 কেশব বলিল—তা বড়লোকের ব্যাপার, চমৎকার হবে না? নয় ত এমন অসময়ে কপি কোথা থেকে এই পাড়াগাঁয়ে আসে বল দিকি। পেয়েছিলে কপির তরকারি?

 —তা আর পাইনি? দু’ দুবার দিয়েছে আমার পাতে। হাঁ গাঁ, এখন কপি কোত্থেকে আনালে? কলকাতায় কি বারমাস কপি মেলে?

 বাড়ির উঠানে তুলসীতলায় একটা মাটির প্রদীপ তখনও টিমটিম করিয়া জ্বলিতেছে। কেশবের স্ত্রী বলিল—ও বাড়ির ছোট-বৌ জ্বলিয়ে দিয়ে গিয়েছে, আহা বড় ভালো মেয়ে আজ সকালে কেঁদে একেবারে আকুল।

 সকালে যে ভাবে ইহারা ফেলিয়া রাখিয়া গিয়াছিল, ঘরবাড়ি সেই ভাবেই পড়িয়া আছে। কারো সাড়া-শব্দ নাই,—নির্জন, নিস্তব্ধ। বাড়িখানা খাঁ খাঁ করিতেছে। আশে পাশে ঘন অন্ধকার, কেবল তুলসীতলায় ওই মিটমিটে মাটির প্রদীপের আলোটুকু ছাড়া।

 কেশব শুইবামাত্র ঘুমাইয়া পড়িল।

 অনেক রাত্রে ঘুমের মধ্যে কেশব স্বপ্ন দেখিতেছিল, বিদ্যুৎ