পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
১০

ব’লে উঠল—এ বুড়োটাকে আবার কোথা থেকে জুটিয়েছে? দেখতে যেন একটা পিপে। এ্যাক্‌টিং করছে দেখ্‌না ঠিক যেন সঙ!

 পাশের আর একজন প্রৌঢ় ভদ্রলোক বললেন—ও এককালে খুব নামজাদা এ্যাক্টার ছিল হে, তখন তোমরা জন্মাও নি। ওর নাম যদু হাজরা।

 আমি হঠাৎ ভদ্রলোকের মুখের দিকে চাইলুম, তারপর একবার বৃদ্ধ অভিনেতাটির দিকে চাইলুম। বাল্য দিনের একটা ঘটনা আমার মনে পড়ে গেল। সেই কনকনে শীতের রাত্রি, সেই শহুরে ডেঁপো-ছেলেদের সঙ্গ, সেই তারা আমাকে ফেলে কোথায় পালাল—তারপর বাড়ি থেকে অনেক দূরে এক অপরিচিত গঞ্জের বারোয়ারী আসরে ময়রার দোকানে খাবার খেয়ে আমার সেই একা বিদেশে দু’দিন কাটানো। সে রাত্রে যার অভিনয় দেখে আমার বালক মন মুগ্ধ বিস্মিত উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল—সেই যদু হাজরা এই?

 এক সময়ে তার যে ধরনের মুখভঙ্গি দেখে ও কথাবার্তার উচ্চারণ শুনে দর্শকেরা আনন্দে উম্মত্ত হ’য়ে উঠত, আজও যদু হাজরা সেই সব হুবহু করে যাচ্ছে আমার চোখের সামনে—অথচ দর্শকেরা খুশি নয় কেন? খুশি তো দুরের কথা, তাদের মধ্যে অনেকে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করছে কেন, ব’সে ব’সে এই কথাটাই ভাবলুম।

 মন যেন কেমন বিষণ্ণ হয়ে উঠল। অপর লোকের কথা কি, আমারই তো যদু হাজরার হাব-ভাব হাস্যকর ঠেকছে! কেন এমন হয়?

 বাল্য দিনের সেই যাত্রার আসরে এঁকে আমি দেখেছিলুম,