পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৩
তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প 

পূর্বপুরুষ ঐ শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু এসব কথা ইনি কি ক’রে জানলেন?

 বিস্ময়ের সুরে বললাম—আপনি আমাদের গাঁয়ের কথা অনেক জানেন দেখছি?

 সন্ন্যাসী মৃদু হাসলেন, এমন হাসি শুধু স্নেহময় বৃদ্ধপিতামহের মুখে দেখা যায়, তার অতি তরুণ, অবোধ পৌত্রের কোন ছেলেমানুষি কথার জন্য। সত্যি বলছি, সে হাসির স্মৃতি আমি এখনও ভুলতে পারি নি, খুব উঁচু না হ’লে অমন হাসি মানুষে হাসতে পারে না। তারপর খুব শান্ত, সস্নেহ কৌতুকের সুরে বললেন—বাড়ি থেকে বেরিয়েছিস্ কেন? ধর্মকর্ম করবি বলে?

 আমি কিছু উত্তর দেবার আগেই তিনি আবার বললেন—বাড়ি ফিরে যা, সংসারধর্ম করগে যা। এপথ তোর নয়, আমার কথা শোন্।

 বললাম—এমন নিষ্ঠুর কথা বলবেন না, কিছু হবে না কেন? আমার সংসারে মন নেই। সংসার ছেড়েই এসেছি।

 তিনি হেসে বললেন—ওর নাম সংসার ছাড়া নয়। সংসার তুই ছাড়িস্ নি, ছাড়তে পারবিও নি। তুই ছেলেমানুষ, নির্বোধ। কিছু বোঝবার বয়েস হয় নি। যা বাড়ি যা। মা-বাপের মনে কষ্ট দিস্ নে।

 কথা শেষ ক’রে তিনি চলে যাচ্ছেন দেখে আমি বল্‌লুম—কিন্তু আমাদের গাঁয়ের কথা কি করে জানলেন বলবেন না? দয়া ক’রে বলুন—

 তিনি কোন কথার উত্তর না দিয়ে জোরে জোরে পা ফেলে, চলতে লাগলেন—আমিও নাছোড়বান্দা হয়ে তাঁর পিছু নিলাম।