পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
১৬৪

 মেয়েটি হেলে ঢ’লে পড়ে আর কি। বললে—এস না, ব’স না এসে পাশে—লজ্জা কি? আহা, আর অত লজ্জায় দরকার নেই। এস—

 হঠাৎ আমার বড় ভয় হ’ল। মেয়েটির রকম-সকম আমার ভালো ব’লে মনে হ’ল না—তা ছাড়া আমার দৃঢ় বিশ্বাস হ’ল এ পাগলীই, আমায় কোন বিপদে ফেলবার চেষ্টায় আছে।

 ফিরে চলে যাচ্ছি, এমন সময়ে পরিচিত কণ্ঠের ডাক শুনে থমকে দাঁড়ালাম, দেখি, বটতলায় পাগলী বসে আছে—আর কেউ কোথাও নেই।

 আমার তখনও ভয় যায় নি। ভাবলাম, আজ আর কিছুতেই এখানে থাকব না, আজ ফিরে যাই।

 পাগলী বললে-—এস, ব’স।

 বললাম—তুমি ও-রকম ছোট মেয়ে সেজেছিলে কেন? তোমার মতলবখানা কি?

 পাগলী বললে— আ মরণ, ঘাটের মড়া, আবোল-তাবোল বকছে।

 বললাম—না, সত্যি কথা বলছি, আমায় কোন ভয় দেখিও না। যখন তোমায় মা ব’লে ডেকেছি।

 পাগলী বললে—শোন্ তবে। তুই সে-রকম নস্। তন্ত্রের সাধনা তোকে দিয়ে হবে না, অত সাধু সেজে থাকবার কাজ নয়। থাক, তোকে দু-একটা কিছু দেব, তাতেই তুই ক’রে খেতে পারবি। একটা মড়া চাই। আসবে শিগ্‌গির অনেক মড়া, এই ঘাটেই আসবে। ততদিন অপেক্ষা কর্। কিন্তু যা ব’লে দেব, তাই করবি। রাজী আছিস্? শবসাধনা ভিন্ন কিছু হবে না।