পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৭
তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প 

 শেয়াল ডাকার সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে হ’ল শ্মশানের নিচে নদীজল থেকে দলে-দলে সব বৌ-মানুষরা উঠে আসছে—অল্পবয়সী বৌ, মুখে ঘোমটা টানা, জল থেকে উঠে এল অথচ কাপড় ভিজে নয় কারো। দলে দলে—একটা, দুটো, পাঁচটা, দশটা, বিশটা।

 তারা সকলে এসে আমায় ঘিরে দাঁড়াল—আমি একমনে মন্ত্র জপ করছি। ভাবছি—যা হয় হবে।

 একটু পরে ভালো ক’রে চাইতে গিয়ে দেখি, আমার চার পাশে একটাও বৌ নয়, সব কর্‌রা পাখি, রীরভূমে নদীর চরে যথেষ্ট হয়া দু-পায়ে গম্ভীর ভাবে হাঁটে ঠিক যেন মানুষের মতো।

 এক মুহূর্তে মনটা হালকা হয়ে গেল—তাই বল! হরি হরি! পাখি!

 চিন্তাটা আমার সম্পূর্ণ শেষও হয়নি—পরক্ষণেই আমার চার পাশে মেয়ে-গলায় কারা খলখল ক’রে হেসে উঠল।

 হাসির শব্দে আমার গায়ের রক্ত আরও হিম হয়ে জমে গেল যেন। চেয়ে দেখি তখন একটাও পাখি নয়, সবই অল্পবয়সী বৌ। তারা তখন সবাই একযোগে ঘোমটা খুলে আমার দিকে চেয়ে আছে।···আর তাদের চারদিকে, সেই বড় মাঠের যেদিকে তাকাই, অসংখ্য নরকঙ্কাল দূরে, নিকটে, ডাইনে, বাঁয়ে, অন্ধকারের মধ্যে সাদা সাদা দাঁড়িয়ে আছে। কত কালের পুরোনো জীর্ণ হাড়ের কঙ্কাল, তাদের অনেকগুলোর হাতের সব আঙুল নেই, অনেকগুলোর হাড় রোদে জলে চটা উঠে ক্ষয়ে গিয়েছে, কোনটার মাথার খুলি ফুটো, কোনটার পায়ের নলির হাড় ভেঙে বেঁকে আছে। তাদের মুখও নানাদিকে