পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম মৃত্যু
১৭৮

বুলাইতে বুলাইতে বলিল—হয় নি। মার তো আজ সোমবার, মা খাবে না—শুধু আমি আর যাদু। তাড়াতাড়ি নেই, এইবার গিয়ে জল চড়াব।

 সুবি নিজে থেকে কোনো কথা বড় একটা রাধার সঙ্গে বলে না—তবে রাধা যে কথা জিজ্ঞাসা করে, ভদ্রভাবে তার উত্তর দেয়।

 রাখা জানে সুবি সাংসারিক কথাবার্তা বলিতে ভালোবাসে না। পড়াশুনা, গান, ফিল্ম, কবিতা প্রভৃতি তাহার কথাবার্তার বিষয়। কলিকাতায় থাকিয়া তাহার রুচি বদলাইয়া গিয়াছে।

 রাধা তাহার মন যোগাইয়া চলিবার চেষ্টায় বলিল—কাল সন্ধ্যেবেলা তুই এলিনে ভাই, আমি কতক্ষণ বসে বসে একটা কবিতা মুখে মুখে বানালাম। তোকে শোনাব আজ দুপুরে।

 —কি কবিতা?

 —আসিস, এখন না। শোনাব। মুখস্থ নেই, ভাই।

 সুবি আর কোন আগ্রহ দেখাইল না। শুধু বলিল-দুপুরে মা কাঁথা সেলাই করবে, আমাকে কাছে বসে সূঁচে সুতো পরাতে হবে। আমার যাওয়া তো হবে না।

 রাধা বলিল—সেই গানটা একটু গা না সুবি?

 সুবি চায়ের পাত্রগুলি হাতে লইয়া চলিয়া যাইতে উদ্যত অবস্থায় বলিল—এখন সময় নেই। অনেক কাজ। চলি।

 রাধা অতি করুণ মিনতির সুরে বলিল—গা না ভাই, দুটো লাইন গা। বলচি এত করে’—

 বলিতে ভুলিয়া গিয়াছি পাড়াগাঁয়ের মেয়ের তুলনায় সুবি গান গাহিতে পারে মন্দ নয়। কলিকাতায় থাকিবার সময় নিধুদা’র কাছে সে অনেক গান শিখিয়াছিল। নিধুদা’ তার কাকীমার