পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৯
ডাকগাড়ি 

পিসতুতো ভাইয়ের ছেলে। কলেজে পড়ে, বেশ গান গাহিতে পারে, চেহারাও ভালো। সুবিকে দিনকতক সে গান শিখাইতে ঘন ঘন আসিত।  সুবি গুন্ গুন্ করিয়া মাত্র দু’ কলি গাহিল—

যৌবন সরসী-নীরে
মিলন শতদল
কোন্ চঞ্চল বন্যায় টলমল টলমল!

 ঠিক এই সময় নাপিতদের ঘাটে নাপিত-বৌ এক কাঁড়ি বাসন লইয়া মাজিতে আসিল। নাপিত-বৌ শ্যামবর্ণ, বয়স উনিশ কুড়ি, খুব সুন্দর নিটোল গড়ন, স্বাস্থ্যবতী, মুখশ্রীর মধ্যে একটা সুলভ ও সহজ সৌন্দর্য আছে—অর্থাৎ যে শ্রীটা এই বয়সেই থাকে, পাঁচ বছর পরে যাহার আর বিশেষ কিছু অস্তিত্ব থাকিবে না। কিন্তু এখন যখন সেটা আছে, তখন খুব জমকালো ভাবেই আসর মাতাইয়া রাখিয়াছে।

 নাপিত-বৌ সুবিকে প্রায় পূজা করিয়া থাকে মনে মনে। তাহার জীবনে এমন মেয়ে সে দেখে নাই। অমন রূপ, অমন কথাবার্তা, অমন লেখাপড়া, অমন গান—সকল দিকেই সুবি নাপিত-বৌয়ের মন হরণ করিয়া লইয়াছে। যে পাড়াগাঁয়ে নাপিত-বৌয়ের বাপের বাড়ি, সে গাঁয়ে এমন একটি মেয়ের কল্পনাও করা শক্ত। ইহার সঙ্গে আলাপ পরিচয়ের সুযোগ পাইয়া সে ধন্য হইয়া গিয়াছে। নাপিত-বৌ আঁচলের চাবিটা শক্ত করিয়া গেরো দিতে দিতে সুবির দিকে প্রশংসমান দৃষ্টিতে চাহিয়া গান শুনিতে লাগিল।

 বলিল—ভারি চমৎকার গল। দিদিমণি আপনার। কখনো এমন শুনিনি, কি গানটা দিদিমণি?