পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৭
অকারণ 

দিচ্চে। আর যেমন পরানো যাচ্চে, অমনি হাত নেড়ে, ঘড়ি দুলিয়ে দন্তহীন মুখে হেসে কুটি কুটি হচ্চে। কিন্তু টুপিটা ভালো করে মাথায় বসাতে পারচে না, একটু পরেই গড়িয়ে পড়ে যাচ্চে, আবার খোকা অতি কষ্টে টুপিটা মাথায় তুলে দিচ্ছে···আবার সেই হাসি, সেই হাত-পা নাড়া, সেই নাচ।···তাকে কেউ দেখচে না, কারুর দেখবার সে অপেক্ষাও রাখচে না, তার চাকর পার্শ্ববর্তিনী আয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আলাপে এমন অন্যমনস্ক, খোকা কি করচে না করচে সেদিকে তার আদৌ খেয়াল নেই, নিকটের অন্য অন্য ছেলেমেয়েরাও নিতান্ত শিশু—ওই খোকাটি আপন মনে বার বার টুপি পরানো খেলা করচে।

 আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে রইলুম। নরম-নরম কচি হাত পায়ের সে কি ছন্দ, কি প্রকাশ—ভঙ্গির কি সজীবতা, কি অবোধ উল্লাস, কি অপূর্ব সৌন্দর্য!···খুশির আতিশয্যে খোকা আবার সামনে ঝুঁকে-ঝুঁকে পড়চে, একগাল হাসচে, ছোট ছোট মুঠি বাঁধা হাত দু’টো একবার তুলচে, একবার নামাচ্চে···শিশুমনের আগ্রহভরা উল্লাসের সে কি বিচিত্র, কি সুস্পষ্ট, ভাষাহীন বার্তা!······

 আমি আর চোখ ফেরাতে পারিনে। হঠাৎ অদৃষ্টপূর্ব, অপ্রত্যাশিত সৌন্দর্যের সামনে পড়ে গিয়েছি যেন। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলুম। হঠাৎ চাকরটার হুঁশ হ’ল—সে আয়ার সঙ্গে গল্প বন্ধ করে খোকার দিকে ফিরে টুপিটা তার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে পাশে একটা পিরাম্বুলেটারের মধ্যে রেখে দিলে। খোকার মুখ অন্ধকার হয়ে গেল। সে টলতে টলতে পিরাম্বুলেটারের পাশে গিয়ে দাঁড়াল, কিন্তু বড্ড উঁচু—তার ছোট্ট হাত দুটি সেখানে পৌঁছয় না। সে একবার অসহায়ভাবে এদিক