পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
২০

মধ্যে দিয়ে ঠেলে যে বাইরে বেরিয়ে গিয়ে এদের স্থানের সঙ্কুলান করবো তাও অসম্ভব। এরা আমাকে সঙ্কোচের হাত থেকে শীঘ্রই অব্যাহতি দিলেন—এই জন্যে যে পেছনে আর একদল এসে ঘরের বাইরে অপেক্ষা করছে, এরা না বেরুলে তারা ঢুকতে পারে না। এরা তো প্রত্যেকে এক-একটা তোড়া দিয়ে গেল—দুটি মেয়ে আবার দুটি বেলের গোড়ে বৃদ্ধের গলায় নিজেরা পরিয়ে দিলে—বৃদ্ধ কি একটা ঠাট্টাও করলেন। আমার তখন শোনবার মতো অবস্থা ছিল না। তারা ঘর থেকে বা’র হয়ে গেলে বৃদ্ধ বললেন—এই আমার বড় ছেলে তারক, আলিপুরে প্রাক্‌টিস্ করে, বালিগঞ্জে বাড়ি করেছে, সেখানেই থাকে। পিছনের দলটির মধ্যে মহিলা নেই—তিনটি ছোকরা, বয়সে ষোল থেকে একুশ, এরা এসে কিছু দিলে না, একজন অটোগ্রাফের খাতা বার করে বললে—জেঠামশায়, আমার খাতায় আজকের দিনে কিছু লিখে দিন। অটোগ্রাফের খাতা ফেরত দিতে না দিতে আর দুটি ছেলে, তাদের সঙ্গে বারো তেরো বছরের একটি বেণী দোলানো মেয়ে।

 তারপরে ব্যাপারটা গণনার বাইরে চলে গেল।

 কত ছেলে-মেয়ে, তরুণ-তরুণী, প্রৌঢ়-প্রৌঢ়া যে ঘরটায় ঢুকতে বেরুতে লাগল, আমার আর তাদের হিসেব রাখা সম্ভব হ’ল না। ফুলে ফুলে তক্তাপোশটা ছেয়ে গেল, ফুলের তোড়। ক্রমশ উঁচু হ’য়ে উঠতে লাগল—আর সেখানে জায়গা দেওয়া যায় না। আর এরা সবাই আত্মীয়-আত্মীয়া, বাইরের লোক কেউ নেই। সব আপনা-আপনির মধ্যে, পুত্র-কন্যা, পৌত্র-পৌত্রী, দৌহিত্র-দৌহিত্রী, জামাই, ভ্রাতৃবধূ, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভ্রাতুষ্পুত্রী—ইত্যাদি ইত্যাদি। ভদ্রলোক ভাগ্যবান, এঁদের মতো লোকের সাহায্য