পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১
জন্ম ও মৃত্যু 

না পেলে প্রজাপতির সৃষ্টি রক্ষা অসম্ভব হ’য়ে উঠ্‌ত। ক্রমশ ভিড় বাড়চে দেখে আমি ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লুম, আমি তখন হাঁপিয়ে উঠেছি। ভদ্রলোকও গোলমালের মধ্যে আমাকে তখন ভুলে গিয়েছেন। আমি তখন বাড়ির বাইরে এসে হাঁপ্ ছেড়ে বাঁচি। বাড়ির সামনের গলিতে সারবন্দী মোটর দাঁড়ানো—সেখানে ধরেনি, গলি ছাপিয়ে মোটরের সারি বড় রাস্তায় এসে পৌঁছেচে, বিয়ে বাড়িতেও এত মোটর জমে কি-না সন্দেহ। গলি পার হ’য়েই বড় রাস্তার মোড়ে নিবারণ মিত্রের সঙ্গে দেখা—সে আমার পরিচিত বন্ধু, সেজেগুজে সিল্কের পাঞ্জাবি শুঁড়ওয়ালা নাগরা পরে তাকে ব্যস্তসমস্ত ভাবে গলিতে ঢুকতে উদ্যত দেখে বললুম, ওহে, তুমিও কি বিশ্বনাথবাবুর বাড়ি যাচ্ছে। না কি?

 —হাঁ। কেন বলত? তুমি বিশ্বনাথবাবুকে চিনলে কি করে?

 —এতক্ষণ সেখানে বসেছিলুম ভাই, দেখে শুনে মাথা ঘুরে উঠল। শহরের এক-তৃতীয়াংশ লোক দেখলুম বিশ্বনাথবাবুর আত্মীয়-আত্মীয়া, আর তাঁরা সবাই এসেছেন ওই সাতাত্তর বছরের বুড়োর জন্মদিনে ফুলের তোড়া উপহার দিতে। তোমার তোড়া কই?

 বন্ধু হেসে বললে—খুব আশ্চর্য লাগছে? বিশ্বনাথবাবুর সাত ছেলে, চার মেয়ে। এদের সকলেরই আবার ছেলেমেয়ে এবং অনেকেরই নাতি নাতনী, নাতজামাই ইত্যাদি হ’য়ে গিয়েছে। বিশ্বনাথবাবুরা তিন ভাই। তাদের ছেলেমেয়ে, নাতি নাতনী আছে। হিসেব ক’রে দ্যাখো কত হয়—এবং আসল কথা কি জানো, বুড়োর হাতে হাজার পঞ্চাশ ষাট টাকা আছে, সকলেরই চোখ সেদিকে একথা যদি বলি, তবে সেটা খুব খারাপ