পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭
জন্ম ও মৃত্যু 

ছেলেপিলে হয়ে গিয়েছে—অনেকের স্বামীরাও এসেছে। তবু তো বুড়ীর বড় মেয়ে অনেক দূর থাকে ব’লে আসতে পারেনি—অপর দুই মেয়ে ও তাদের ছেলেমেয়েরা এসেছে। সবাই ব্যস্তসমস্ত, এখানে তরকারি কোটা হ’চ্চে, ওখানে জিনিসের ফর্দ হ’চ্ছে, বাড়িময় ছেলেমেয়েদের চিৎকার, হাসি, ছোটাছুটি—মেয়েরা এ ওকে ডাকছে, মায়েরা ছেলেপিলেদের বকছে, কুয়োতলায় বড় বড় পেতলের গামলা মাজার শব্দ, বাড়িসুদ্ধ সবাই শশব্যস্ত, কারো হাতে একদণ্ড সময় নেই।

 —ওরে ও ঝি, রেণুর গায়ের জামাটা ছাড়িয়ে নিয়ে কেচে দেনা বাপু, কতক্ষণ থেকে বলছি, আমার কি সব সময় সব কথা মনে থাকে?

 —ও কমলা, হেলে দুলে বেড়ােচ্ছ মা, ততক্ষণ পানগুলো তুমি আর বীণা নিয়ে ধুয়ে ফেল না—এরপর আর সময় পাবে?···কি—কি—আবার মরছে ডেকে ছোট বৌ―মাগো, হাড় জ্বালালে—বসতে দেয় না একরত্তি—এই তো আসছি ভাঁড়ার ঘর থেকে—

 একটি সতরো-আঠারো বছরের সুন্দরী মেয়ে দালানে ঢুকবার দরজায় এক পাশে একটা স্টোভ ধরাবার চেষ্টা করছে—আমি পাশ কাটিয়ে দালানের মধ্যে ঢুকে দেখি—মেজ ছেলে বীরেশ্বর ও তার বৌয়ে ঝগড়া হ’চ্ছে। মেজ ছেলে কোন জমিদারী ষ্টেটের ম্যানেজার, বয়েস পঞ্চাশের ওপর—তার স্ত্রীকে আগে কৃশাঙ্গী দেখেছি, আজ আট ন’ বছর দেখিনি—এত মোটা হয়েছেন যে এরি মধ্যে প্রথমটা যেন চিনতেই পারি না। হাতে মোটা সোনার বালা ও অনন্ত, গলায় ছিকলি হার। তিনি স্বামীকে বলছেন—ও ঘরে আমি থাকতে পারব না, এই ভিড়, তাতে ও ঘরে খিল নেই। আমার মেয়ের গায়ে এক গা