পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩
সই 

হলি চাল কিনে নে যাব, এ-বেলা ভাত রাঁধব অখন। এখন তোমার সই-মা যা খাতি দ্যায়, তাই খেয়ে থাক। পয়সা নেই যে, মাণিক।

 এই সময় আমার বোন জল এবং বোধ হয় বাটিতে একটু গুড় লইয়া রোয়াকে গিয়া উপস্থিত হইল—কারণ শুনিলাম সে ছেলেটিকে বলিতেছে—নে, হাবলা, হাত পাত, গুড়টা খেয়ে জল খা। শুধু জল খেতে নেই।

 হাবলা ও হাবলার মা যে একটু নিরাশ হইয়াছে, ইহা আমি তাহাদের গলার সুর হইতেই অনুমান করিলাম। হাবলার মা নিরুৎসাহভাবে বলিল, নে, গুড়টুকু হাতে নে। খেয়ে ফেল। যেন রোয়াকে না পড়ে—

 ঠিক দুপুরের পরই সময়টা, এখন যে কিছু খাইতে দেওয়া প্রয়োজন, এ-কথা আমার বোনের মাথায় আসে নাই বুঝিলাম। তা ছাড়া পল্লীগ্রামে এ-রকম নিয়মও নাই।

 —ভালো কথা সই, তোমার জন্যি ভালো নঙ্কার বীজ এনেলাম। এই মোর আঁচলে বাঁধা ছেলো, তা রাস্তার মাঝখানে কোথায় পড়ে গিয়েছে। বাসায় জায়গা আছে গাছপালা দেবার? আসচে হাটবারে আবার নিয়ে আসব।

 এই সময়ে আমার ছোট ভাগ্নে স্কুল হইতে ফিরিল। টিফিনের ছুটি হইয়াছে, সে সকালে খাইয়া থাকিতে পারে নাই বলিয়া ভাত খাইতে আসিয়াছে।

 —ও টুলু, চিনতে পার তোমার সই-মারে? হি হি, ও মা ছেলে এরি মধ্যে কত বড় হয়ে গিয়েচে মাথায়। গায়ে এটা কি, জামা? বেশ জামাটা।

 আমার ভাগিনেয় এই বয়সেই একটু চালবাজ। গ্রাম হইতে