পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪১
রামশরণ দারোগার গল্প 

 শেষ পর্যন্ত কতকটা উপরোধে পড়ে—কতকটা কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে গেলাম সেই কালীবাড়ী। কিন্তু স্ত্রীলোকটিকে থানায় বসিয়ে রেখে গেলাম। কালী মন্দিরের কাছেই ছোট্ট একতলা ঘরের একটা কুঠুরীতে পূজারী-ঠাকুর থাকে, সন্ধান নিলাম। পূজারীকে খুঁজে বার করতে বেগ পেতে হ’ল না। বছর পঁয়ত্রিশ বয়েস, একহারা পাকসিটে চেহারা। এই বয়সেই চুলে বেশ পাক ধরেছে, দেখেই মনে হ’ল—নেশাখোর লোক। ধড়িবাজও বটে।

 তাকে সব খুলে বললাম। পুলিশ দেখে সে জড়সড় হয়ে গিয়েছে। কাঁচু-মাচু ভাবে বললে—“আজ্ঞে বাড়িতে যদি আপত্তি না করে, আপনি গিয়ে শাশুড়ী ঠাকরুণকে নিয়ে আসুন, আমি পাঠিয়ে দেব। যদি সত্যি কথা জিজ্ঞেস করেন দারোগাবাবু, আমার মোটেই আপত্তি নেই। একটা পেট আমার, যে-কোনো রকমে চালিয়ে নেব। বেশ, আপনি চলুন আমার বাসায়। আমার স্ত্রীকে বলুন—আমি সেখানে থাকব না।”

 এর পরে আমার এমন একটা অভিজ্ঞতা হ’ল, যা অতদিনের পুলিশ-জীবনে কখনো হয়নি। পূজারী যখন তার স্ত্রীকে দোর খুলতে বললে—আমরা তখন দোরের পাশে, কিন্তু অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে। দোর কে একজনে এসে খুলতেই পূজারী-ঠাকুর বললে, দুটি ভদ্রলোক এসেছেন তোমার বাপের বাড়ি থেকে,—তোমার মায়ের কাছ থেকে, ওঁরা তোমাকে কি বলবেন। ওঁদের সঙ্গে কথা বল। আমি একটু জলটল খাওয়ানোর ব্যবস্থা দেখি।

 তারপর আমাদের দিকে চেয়ে বললে, আসুন আপনারা,—কথাবার্তা বলুন।···আসচি আমি।