পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
৬৬

কোনো কালে, আমি তামাক খাই না খাই তাতে ওর কি আসে যায়?

 অগত্যা বললুম—সাজ—

 এইবার তাকে ভালো করে দেখলুম! বয়েস ত্রিশের মধ্যে, মুখশ্রী কাঁচা, লম্বা লম্বা চুল। গায়ে একটা খাকির সার্ট। কিন্তু ওর চোখ দু’টো এত শান্ত ও এত নিরীহ যে, দেখলেই তার ওপর কোন সন্দেহ বা অবিশ্বাস আসে না। একটা ভাঙা ছাতি আর একটা বোঁচকা ওর সম্বল, ধরন-ধারণে নিছক খাঁটি ভবঘুরে।

 দু’জনে একদিকেই পথ চলতে আরম্ভ করলুম তারপর থেকে। মামুদপুরের বাজারে এসে সন্ধ্যা হয়ে গেল। একটি মুদীর দোকানে রাত্রের জন্যে আশ্রয় নিলুম দু’জনেই—কারণ সবাই বললে,—এখন দুর্ভিক্ষের সময়, সন্ধ্যার পরে এ পথে হাঁটা নিরাপদ নয়। অনেক সময়, সামান্য পয়সার জন্যে মানুষ খুন করেছে।

 আমার সঙ্গীর সঙ্গে ইতিমধ্যে আমার বেশ আলাপ পরিচয় হয়ে গিয়েছে। সে ব্রাহ্মণের ছেলে, নদীয়া জেলাতেই কোন্ গ্রামে বাড়ি, সংসারে কেউ নেই, দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায়। বছরখানেক পথে বিপথে ঘুরবার পরে সম্প্রতি নিজের গ্রামে ফিরে যাচ্ছে।

 একটা স্বভাব দেখলুম তার, সাধারণের পক্ষে স্বভাবটা খুব অদ্ভুত বলতে হবে। লোকের এতটুকু উপকার করতে পারলে সে যেন বেঁচে যায়। কাছের লোককে কি করে খুশি করবে, এই হ’ল তার জীবনে মস্ত বড় একটা নেশা!

 রাত্রে সে-ই রান্না করলে। আমায় এতটুকু সাহায্য পর্যন্ত করতে দিলে না।