পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৩
অরন্ধনের নিমন্ত্রণ 

মাটি হয়ে গেল হীরুদার জন্যে। পাহাড় থেকে নামবার পথে হীরু হঠাৎ বললে—মণি, একটি মেয়েকে বিয়ে করবে ভাই?

 মণি হো হো ক’রে হেসে উঠে বললে—কি ব্যাপার বল তো হীরুদা? তোমার আজ হয়েছে কি?

 —কিছু হয় নি, বলো না মণি? একটি গরীবের মেয়েকে বিয়ে ক’রে দায় উদ্ধার করো না? তোমার মতো ছেলের—

 —কি, তোমার কোনো আপনার লোক? তোমার নিজের বোন নাকি?

 —বোন না হ’লেও বোনের মতই। বেশ মেয়েটি দেখতে, সুশ্রী, বুদ্ধিমতী।

 —আমার কথায় তো কিছু হবে না, তুমি বাবাকে কি মাকে বলো। একে তো লেখাপড়া নিয়েই বাবাকে চটিয়ে রেখেচি, আবার বিয়ে নিয়ে চটালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। বাবার মেজাজ বোঝ তো?

 রাত্রে নিজের ছোট্ট বাসাটিতে হীরু কথাটা আবার ভাবলে। আজ পাহাড়ের ওপর উঠেই তার কেমন সব গোলমাল হয়ে গিয়েছিল। কুমীর কথা তাহলে তো সে মোটেই ভোলে নি! নীল আকাশ, নির্জনতা, ফুটন্ত বন্য ক্যামেলিয়া ফুল, বনতুলসীর গন্ধ—সব সুদ্ধ মিলে একটা বেদনার মতো তার মনে এনে দিয়েছে কুমীর হাসিভরা ডাগর চোখ দুটির স্মৃতি, তার হাত নাড়ার ললিত ভঙ্গি, তার অনর্গল বকুনি···সে তো সন্ন্যাসী হ’য়ে যাবে রামকৃষ্ণ আশ্রমে সবাই জানে, মিথ্যেই পিসিমা কুমীর বাবাকে বিয়ের কথা গিয়েছিলেন বলতে। কিন্তু কুমীকে জীবনে সুখী করে দিয়ে যেতে হবে। এ তার একটা কর্তব্য।

 সাহসে ভর ক’রে মণির বাপের কাছে সে প্রস্তাবটা