পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যদু হাজরা ও শিখিধ্বজ 

 আমি বিষণ্ণ মুখে ভাবছি, ওর দু' হাতের মধ্যে কতগুলো কলা ধরতে পারে—সে খিলখিল করে হেসে উঠে বিজ্ঞের ভঙ্গীতে ঘাড় নেড়ে আমার মাইনর স্কুলে সেকেণ্ড ক্লাসে অর্জিত বিদ্যার অকিঞ্চিৎকরত্ব প্রতিপন্ন করলে।

 তারপর থেকে আমি তাকে ভয়ে-ভয়ে এড়িয়ে চলতে লাগলুম। বয়স তার আমার চেয়ে বেশিও বটে, শহর অঞ্চলে ইংরাজী স্কুলে পড়েও বটে, দরকার কি ওর সঙ্গে মিশে? তা ছাড়া চৌমাথার মোড়ে দাঁড়িয়ে আমি আর কত অপমানই বা সহ্য করি!

 কিন্তু সে আমায় যতই জ্বালাতন করুক, জীবনে সে আমার একটা বড় উপকার করেছিল—সে জন্যে আমি তার কাছে চিরকাল কৃতজ্ঞ। সে যদু হাজরার অভিনয় আমাকে দেখিয়েছিল।

 সন্ধ্যার কিছু আগে সে আমায় বললে—এই, কি তোমার নাম, রাজগঞ্জের বাজারে বারোয়ারী হবে, শুনতে যাবে?

 রাজগঞ্জ ওখান থেকে প্রায় আড়াই ক্রোশ পথ। হেঁটেই যেতে হবে, কিন্তু যাত্রা শুনবার নামে আমি এত উত্তেজিত হ'য়ে উঠলাম যে, এই দীর্ঘ পথ-এর সাহচর্যে অতিক্রম করবার যন্ত্রণার দিকটা একেবারেই মনে পড়ল না।

 তথাপি সারা পথ যতীন ও তার দলের তারই বয়সী জন কয়েক ছোকরা অশ্লীল কথাবার্তা ও গানে আমাকে নিতান্ত উত্যক্ত করে তুললে। আমি যে বাড়ির আবহাওয়ায় মানুষ,—আমার বাবা, মা, জ্যাঠামশায় সকলেই নিতান্ত বৈষ্ণব প্রকৃতির। প্রায় আমারই বয়সী ছেলের মুখে ওরকম টপ্পা ও খেউড় শুনে আমার অনভিজ্ঞ বালক-মনের নীতিবোধ ক্রমাগত ব্যথা পেতে লাগল।