পাতা:জল খাবার - কিরণলেখা রায়.pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জল খাবার:৮

কিরণলেখা লিখেছেন, ‘মুর্শিদাবাদ-কাঁদি রাজবংশের কুলদেবতা শ্রীশ্রী রাধাবল্লভ জীউর ভােগে এই নিত্য দেয় বলিয়া ইহার নাম ‘রাধাবল্লভী পূরি’ হইয়াছে।’

 জলখাবার-এ কিরণলেখা পরমায় বা পায়েস, বিভিন্ন প্রকারের মিষ্টি চন্দ্রকান্ত, গঙ্গাজলী, মানােহবা প্রভৃতি এবং বাঙালির নিজস্ব খাবার বিভিন্ন প্রকারের পিঠের উল্লেখ করেছেন। ‘সন্দেশ’ এবং ‘দহি’কে শরৎকুমার বিশেষ করে খাঁটি বারে বলে উল্লেখ করেছেন। বাঙলিব কাব্য রামায়ণে নানা ধরনের সন্দেশের উল্লেখ আছে। আবার মঙ্গলকাব্যের কবিরাও বাড়ির মেয়ে বউয়ের রন্ধন নিপুণতা এবং পারদর্শিতা তাঁদের কাব্যে উল্লেখ করেছেন। পনের শতকে রচিত ‘মনসা-মঙ্গল’ কাব্যে বিজয়গুপ্ত সােণকার-রন্ধন অংশে উল্লেখ করেছেন: ‘মিষ্টান্ন অনেক রান্ধে নানাবিধ রস। /দুই তিন প্রকারের পিষ্টক পায়স।’ অথবা ‘পরমান্ন পিষ্টক যে রান্ধিছে সণকা/ঘৃত পােথা চন্দ্রকাইট আর দুগ্ধপূলী/ আইলবড়া ভাজিলেক ঘৃতেত মিশালী॥/জাতিপুলী ক্ষীরপুলী চিতলােটী ইতাদি।’

 মঙ্গলকাব্যে ‘উত্তম ক্ষীরসা দিয়া গঙ্গাজলী নাড়ু’র যেমন সন্ধান পাওয়া যায় আবার এই ষােল শতকে রচিত ‘গােবিন্দলীলামৃত’-গ্রন্থে কৃষ্ণের আহারের মধ্যে সন্ধান পাওয়া যায় ‘ক্ষীরসার চিনি-পাকে পান্ন করিয়া শ্রীরাধিকা আনে যাহা ঘরেতে বানাইয়া/আম বি পড়িম্বাদিনারিকেল তরুপকান্নের এই সব বৃক্ষাদি আনিল? এসব খাইয়া কৃষ্ণ হরিস পাইল॥/চন্দ্রকান্তি গঙ্গাজল আদি লাড়গণে। বিশ শতকের কিরণলেখার ‘জলখাবার’ গ্রন্থে পক্কান্ন, দুগ্ধপুলী, ক্ষীরপুলী, ক্ষীরসার, গঙ্গাজলী, চন্দ্রকাঁইত এবং পিষ্টকের শ্রেণীবিভাগ ও তাদের নির্মাণ-পদ্ধতি বিশেষভাবে আলােচিত।

 ‘জলখাবার’-এর ষােড়শ অধ্যায়ের ‘পিঠা’ অংশে শুকনাে পিঠেকে কিরণলেখা ‘আশকে পিঠা’ বলেছেন। ‘আশকে’ নামকরণের উৎস বলতে তিনি জানিয়েছিলেন: ‘মহারাজাধিরাজ ভারতসম্রাট মৌর্য্য অশােকের নামে এই পিঠা উৎসর্গীকৃত বলিয়াই কি ইহার নাম অশােকীয় পিষ্টক-আশ্‌কে পিঠা হইয়াছে?’ কুমার শরৎকুমার রায় গ্রন্থের ভূমিকায় উল্লেখ করেছে “বরেন্দ্র রন্ধনের পন্থানুসরণে এতৎ গ্রন্থেও কতকগুলি বৈদেশীক খাবার প্রস্তুত প্রণালী দিয়াছি।” কিরণলেখা ‘জলখাবার’-এর তৃতীয় অধ্যায়ে জানিয়েছেন, “বৈদেশিক রন্ধন ‘বরেন্দ্র রন্ধনের’ বা এই গ্রন্থের বিষয়ীভূত নহে সুতরাং তৎসম্বন্ধে সমাক জানিতে হইলে তৎতৎ বিষয়ক বিশেষ গ্রন্থের আলােচনার প্রয়ােন। অস্মদ্দেশীয় আহার্য্যের সহিত বৈদেশিক আহার্য্যের যেখানে যেখানে কতকটা সাদৃশ্য আছে অধুনাতন রুচীর দিকে লক্ষ রাখিয়া তাহাই কেবল অতি স্থূলভাবে এতদুভয় গ্রন্থে দেখাইতে চেষ্টা করিয়াছি।”