পাতা:জাপানে-পারস্যে-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপানে-পারস্যে
৯৯

—কোনো ধর্মে তার প্রয়োজন আছে কিনা, এবং ধর্মটা কী। কিছু ন এমনও তার সংকল্প ছিল যে, সে খৃস্টানধর্ম গ্রহণ করবে। তখন তার বিশ্বাস ছিল যে, য়ুবোপ যে-ধর্মকে আশ্রয় করেছে, সেই ধর্ম হয়ত তাকে শক্তি দিয়েছে—অতএব খৃস্টানীকে কামান-বন্দুকের সঙ্গে সঙ্গেই সংগ্রহ করার দরকার হবে; কিন্তু আধুনিক য়ুরোপে শক্তি-উপাসনার সঙ্গে সঙ্গে কিছুকাল থেকে এই কথাটা ছড়িয়ে পড়েছে যে, খৃস্টানধর্ম ভাব-দুর্বলের ধর্ম, তা বীরের ধর্ম নয়। য়ুরোপ বলতে শুরু করেছিল—যে-মানুষ ক্ষীণ, তারই স্বার্থ নম্রতা ক্ষমা ও ত্যাগধর্ম প্রচার করা। সংসারে যারা পরাজিত, সে-ধর্মে তাদেরই সুবিধা; সংসারে যারা জয়শীল, সে ধর্মে তাদের বাধা। এই কথাটা জাপানের মনে সহজেই লেগেছে। এইজন্যে জাপানের রাজশক্তি আজ মানুষের ধর্মবুদ্ধিকে অবজ্ঞা করছে। এই অবজ্ঞা আর কোনো দেশে চলতে পারত না; কিন্তু জাপানে চলতে পারছে, তার কারণ জাপানে এই বোধের বিকাশ ছিল, এবং সেই বোধের অভাব নিয়েই জাপান আজ গর্ব বোধ করছে—সে জানছে পরকালের দাবি থেকে সে মুক্ত, এইজন্যই ইহকালে সে জয়ী হবে।

 জাপানের কর্তৃপক্ষরা যে-ধর্মকে বিশেষরূপে প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন, সে হচ্ছে শিন্তো ধর্ম। তার কারণ এই ধর্ম কেবলমাত্র সংস্কারমূলক; আধ্যাত্মিকতামূলক নয়। এই ধর্ম রাজাকে এবং পূর্ব-পুরুষদের দেবতা বলে মানে। সুতরাং স্বদেশাসক্তিকে সুতীব্র করে তোলবার উপায় রূপে এই সংস্কারকে ব্যবহার করা যেতে পারে।

 কিন্তু য়ুরোপীয় সভ্যতা মঙ্গোলীয় সভ্যতার মতো একমহাল নয়। তার একটি অন্তরমহল আছে। সে অনেক দিন থেকেই Kingdom of Heavenকে স্বীকার করে আসছে। সেখানে নম্র যে, সে জয়ী হয়; পর যে, সে আপনার চেয়ে বেশি হয়ে ওঠে। কৃতকর্মতা নয়,