পাতা:জাপানে-পারস্যে-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পারস্যে
১১৫

ভাবছিলুম সৃষ্টিটা ছন্দের লীলা। যে-তালের লয়ে আমরা এই জগতকে অনুভব করি সেই লয়টাকে দূনের দিকে বিলম্বিতের দিকে বদলে দিলেই সেটা আর এক সৃষ্টি হবে। অসংখ্য অদৃশ্য রশ্মিতে আমরা বেষ্টিত। আমাদের স্নায়ুস্পন্দনের ছন্দ তাদের স্পন্দনের ছন্দের সঙ্গে তাল রাখতে পারে না বলে তারা আমাদের অগোচর। কী করে বলব এই মুহূর্তেই আমাদের চারদিকে ভিন্ন লয়ের এমন অসংখ্য জগত নেই যারা পরস্পরের অপ্রত্যক্ষ। সেখানকার মন আপন বোধের ছন্দ অনুসারে যা দেখে যা জানে যা পায় সে আমাদের পক্ষে সম্পূর্ণ অগম্য, বিভিন্ন মনের যন্ত্রে বিভিন্ন বিশ্বের বাণী এক সঙ্গে অদ্ভুত হচ্ছে সীমাহীন অজানার অভিমুখে।

 এই ব্যোমবাহনে চড়ে মনের মধ্যে একটা সংকোচ বোধ না করে থাকতে পারি নে। অতি আশ্চর্য এই যন্ত্র, এর সঙ্গে আমার ভোগের যোগ আছে, কিন্তু শক্তির যোগ নেই! বিমানের কথা শাস্ত্রে লেখে, সে ছিল ইন্দ্রলোকের, মর্তের দুষ্যন্তেক্ষা মাঝে মাঝে নিমন্ত্রিত হয়ে অন্তরীক্ষে পাড়ি দিতেন, আমারও সেই দশা। একালের বিমান যারা বানিয়েছে তারা আর এক জাত। শুধু যদি বুদ্ধির জোর এতে প্রকাশ হত তাহলে কথা ছিল না। কিন্তু চরিত্রের জোর—সেটাই সবচেয়ে শ্লাঘনীয়। এর পিছনে দুর্দম সাহস, অপরাজেয় অধ্যবসায়। কত ব্যর্থতা, কত মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একে ক্রমে সম্পূর্ণ করে তুলতে হচ্ছে, তবু এরা পরাভব মানছে না। এখানে সেলাম করতেই হবে।

 এই ব্যোমতরির চারজন ওলন্দাজ নাবিকের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখি। বিপুল বপু, মোটা মোটা হাড়, মূর্তিমান উদ্যম। যে-আবহাওয়ায় এদের জন্ম সে এদের প্রতিক্ষণে জীর্ণ করে নি, তাজা রেখে দিয়েছে। মজ্জাগত স্বাস্থ্য ও তেজ কোনো একঘেয়ে বাঁধা ঘাটে এদের স্থির থাকতে দিল না। বহু পুরুষ ধরে প্রভূত বলদায়ী অন্নে এরা পুষ্ট, বহু যুগের