পাতা:জাপানে-পারস্যে-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পারস্যে
১৩৫

 পারস্যের রাজাদের মধ্যে নাসির উদ্দিন প্রথম য়ুরোপে যান আর তাঁর আমল থেকেই দেশকে বিদেশীর ঋণজালে জড়িত করা শুরু হল। তাঁর ছেলে মজফফর উদ্দিনের আমলে এই জাল বিস্তৃত হবার দিকে চলল। তামাকের ব্যবসার একচেটে অধিকার তিনি দিলেন এক ইংরেজ কোম্পানিকে। এটা দেশের লোকের সইল না, তারা তামাক বয়কট করে দিলে। দেশশুদ্ধ তামাকখোরদের তামাক ছাড়া সোজা নয়, কিন্তু তাও ঘটল। এই উপায়ে এটা রদ হয়ে গেল কিন্তু দণ্ড দিতে হল কোম্পানিকে খুব লম্বা মাপে। তারপরে লাগল রাশিয়া, তার হাতে রেলওয়ে। বেলজিয়ম থেকে কর্মচারী এল পারস্যে ট্যাক্স আদায়ের কাজে—ইংরেজও উঠে পড়ে লাগল পারস্য বিভাগের কাজে।

 এদিকে দেশের লোকের কাছ থেকে ক্রমাগত তাগিদ আসছে রাষ্ট্রসংস্কারের। শেষকালে রাজাকে মেনে নিতে হল। প্রথম পারসীক পার্লামেণ্ট খুলল ১৯০৬ খ্রীস্টাব্দে অক্টোবরে।

 এ রাজা মারা গেলেন। ছেলে বসলেন গদিতে—শা মহম্মদ আলি। পারস্যে তখন প্রাদেশিক গবর্ণররা ছিল এক এক নবাব বিশেষ, তারা সকল বিষয়েই দেয় বাধা। প্রজারা এদের বরখাস্ত করবার দাবি করলে, আর মাশুল আদায়ের বেলজিয়ান কর্তাদেরও সরিয়ে দেবার প্রস্তাব পার্লামেণ্টে উঠল।

 বলা বাহুল্য, দেশের লোক পার্লামেণ্ট শাসনপদ্ধতিতে ছিল আনাড়ি। দায়িত্ব হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ক্রমে ক্রমে তাদের হাত পেকে উঠল। কিন্তু রাজকোষ শূন্য, রাজস্ব বিভাগ ছারখার।

 অবশেষে একদা ইংরেজে রাশিয়ানে আপোষ হয়ে গেল। দুই কর্তার একজন পারস্যের মুণ্ডের দিকে আর একজন তার ল্যাজের দিকে দুই হাওদা চড়িয়ে সওয়ার হয়ে বসল, অঙ্কুশরূপে সঙ্গে রইল সৈন্যসামন্ত।