পাতা:জাপানে-পারস্যে-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৬২
জাপানে-পারস্যে

 তিন শ বছর হয়ে গেল শা আব্বাস রুশিয়া থেকে বহু সহস্র আর্মানি আনিয়ে ইস্ফাহানে বাস করান। তারা কারিগর ছিল ভালো। তখনকার দেশবিজয়ী রাজারা শিল্পদ্রব্যের সঙ্গে শিল্পীদেরও লুট করতে ছাড়তেন না। শা আব্বাসের মৃত্যুর পর তাদের উপর উৎপাত আরম্ভ হল। অবশেষে নাদির শাহের আমলে উপদ্রব এত অসহ্য হয়ে উঠল যে টিঁকতে পারলে না। সেই সময়েই আর্মানিরা প্রথম ভারতবর্ষে পালিয়ে আসে। বর্তমান বাদশাহের আমলে তাদের কোনো দুঃখ নেই। কিন্তু সেকালে কারুনৈপুণ্য সম্বন্ধে তাদের যে খ্যাতি ছিল এখন তার আর কিছু বাকি আছে বলে বোধ হল না।

 বাজারের মধ্য দিয়ে বাড়ি ফিরলুম। আজ কী একটা পরবে দোকানের দরজা সব বন্ধ। এখানকার সুদীর্ঘ চিনার বীথিকায় গিয়ে পড়লুম। বাদশাহের আমলে এই রাস্তার মাঝখান দিয়ে টালি-বাঁধানো নালায় জল বইত, মাঝে মাঝে খেলত ফোয়ারা, আর ছিল ফুলের কেয়ারি। দরকারের জিনিসকে করে ছিল আদরের জিনিস, পথেরও ছিল আমন্ত্রণ, আতিথ্য।

 ইস্ফাহানের ময়দানের চারিদিকে যে সব অত্যাশ্চর্য মসজিদ দেখে এসেছি তার চিন্তা মনের মধ্যে ঘুরছে। এই রচনা যে-যুগের সে বহুদূরের, শুধু কালের পরিমাপে নয় মানুষের মনের পরিমাপে। তখন এক একজন শক্তিশালী লোক ছিলেন সর্বসাধারণের প্রতিনিধি। ভূতল সৃষ্টির আদিকালে ভূমিকম্পের বেগে যেমন বড়ো পাহাড় উঠে পড়েছিল তেমনি। এই পাহাড়কে সংস্কৃত ভাষায় বলে ভূধর, অর্থাৎ সমস্ত ভূমিকে এই এক একটা উচ্চচূড়া দৃঢ় করে ধারণ করে এই রকম বিশ্বাস। তেমনি মানব সমাজের আদিকালে এক একজন গণপতি সমস্ত মানুষের বল আপনার মধ্যে সংহত করে জনসাধারণকে নিজের মধ্যে