পাতা:জাপানে-পারস্যে-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৬৪
জাপানে-পারস্যে

ওই ভাঙা থামগুলো সেকালের একটা সংকেতমাত্র নিয়ে আছে ব্যতিব্যস্ত বর্তমানকে পথ ছেড়ে দিয়ে—সেই সংকেতের সমস্ত সুমহৎ তাৎপর্য অতীতের দিকে। নিচের রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে ইতরের মতো গর্জন করে চলেছে মোটর রথ। তাকেও অবজ্ঞা করা যায় না তার মধ্যেও মানব-মহিমা আছে—কিন্তু এরা দুই পৃথক জাত সগোত্র নয়। একটাতে আছে সর্বজনের সুযোগ, আর একটাতে আছে সর্বজনের আত্মশ্লাঘা। এই শ্লাঘার প্রকাশে আমরা দেখতে পেলুম সেই অতীতকালের মানুষ কেমন করে প্রবল ব্যক্তিস্বরূপের মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নিজেকে মিলিয়ে দিয়ে এক একটি বিরাট আকারে আপনাকে দেখতে চেয়েছে। প্রয়োজনের পরিমাপে সে আকারের মূল্য নয়, প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশিকেই বলে ঐশ্বর্য-সেই ঐশ্বর্যকে তার অসামান্যরূপে মানুষ দেখতে পায় না যদি কোনো প্রবল শক্তিশালীর মধ্যে আপন শক্তিকে উংসৃষ্ট করে এই ঐশ্বর্যকে ব্যক্ত করা না হয়। নিজের নিজের ক্ষুদ্র শক্তি ক্ষুদ্র প্রয়োজনের মধ্যে প্রতিদিন খরচ হয়ে যায়, সেই দিনযাত্রা প্রয়োজনের অতীত মাহাত্ম্যকে বাঁধতে পারে না। সেই ঐশ্বর্য যুগ, যে ঐশ্বর্য আবশ্যককে অবজ্ঞা করতে পারত এখন চলে গেছে। তার সাজসজ্জা সমারোহভার এখনকার কাল বহন করতে অস্বীকার করে। অতএব সেই যুগের কীর্তি এখনকার চলতি কালকে যদি চেপে বসে তবে এইকালের অভিব্যক্তির পথকে বাধাগ্রস্ত করবে।

 মানুষের প্রতিভা নবনবোন্মেষে, কোনো একটামাত্র আবির্ভাবকেই দীর্ঘায়িত করার দ্বারা নয়, সে আবির্ভাব যতই সুন্দর যতই মহৎ হক। মাদুরার মন্দির ইস্ফাহানের মসজিদ প্রাচীন কালের অস্তিত্বের দলিল— এখনকার কালকে যদি সে দখল করে তবে তাকে জবরদখল বলব। তারা যে সজীব নয় তার প্রমাণ এই যে আপন ধারাকে আর তারা চালনা