পাতা:জাপানে-পারস্যে-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 ২৯ এপ্রিল। ইস্ফাহান থেকে যাত্রা করা গেল তেহেরানের দিকে নগরের বাহিরেও অনেকদূর পর্যন্ত সবুজ ক্ষেত, গাছপালা ও জলের ধারা। মাঝে মাঝে গ্রাম। কোথাও বা তারা পরিত্যক্ত। মাটির প্রাচীর ও দেয়ালগুলি জীর্ণতার নানাভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে, ভিতরে উপরে ছাদ নেই। এক জায়গায় এই রকম ভাঙা শূন্য গ্রামের সামনেই পথের ধারে পড়ে আছে উটের কংকাল। ঐ ভাঙা ঘরগুলো, আর ঐ প্রাণীটার বুকের পাঁজর একই কথা বলছে। প্রাণের ভারবাহী যে সব বাহন প্রাণহীন কিছুদিন তারাই থাকে বোবার মতো পড়ে, আর প্রাণ যায় চলে। এখানকার মাটির ঘর যেন মাটির তাঁবু,উপস্থিত প্রয়োজনের ক্ষণিক তাগিদে খাড়া করা, তারপরে তার মূল্য ফুরিয়ে যায়। দেখি আর ভাবি এই তো ভালো। গড়ে তোলাও সহজ, ফেলে যাওয়াও তাই। বাসার সঙ্গে নিজেকে ও অপরিচিত আগামীকালকে বেঁধে রাখবার বিড়ম্বনা নেই। মানুষের কেবল যদি একটা মাত্র দেহ থাকত বংশানুক্রমে সকলের জন্যে, খুব মজবুত চতুর্দন্ত হাতির হাড় আর গণ্ডারের সাতপুরু চামড়া দিয়ে খুব পাকা করে তৈরি, চোদ্দ পুরুষের একটা সরকারী দেহ, যেটা অনেকজনের পক্ষে মোটামুটিভাবে উপযোগী কিন্তু কোনো একজনের পক্ষে প্রকৃষ্টভাবে উপযুক্ত নয় নিশ্চয় সেই দেহদুর্গটা প্রাণপুরুষের পছন্দসই হত না। আপন বসতবাড়িকে বংশানুক্রমে পাকা করে তোলবার চেষ্টা প্রাণধর্মের বিরুদ্ধ। পুরানো বাড়ি আপন যুগ পেরতে পেরতে পোড়ো বাড়ি হতে বাধ্য। পিতৃপুরুষের অপব্যয়কে উপেক্ষা করে নতুন বংশ নতুন পাড়ায় গিয়ে বাস করে। আশ্চর্য এই যে, সেও ভাবী ভগ্নাবশেষ সৃষ্টি করবার জন্যে দশপুরুষের মাপে অচল ভিত বানাতে