পাতা:জাপানে-পারস্যে-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পারস্যে
২০৭

ঘোড়সওয়াররা ঘোড়া ছোটাবার খেলা দেখিয়ে দিলে। মনে হল মরুভূমির ঘূর্ণা হাওয়ার দল শরীর নিয়েছে।

 বোধ হচ্ছে আমার ভ্রমণ এই “আরব বেদুয়িনে” এসেই শেষ হল। দেশে যাত্রা করবার আর দু-তিন দিন বাকি কিন্তু শরীর এত ক্লান্ত যে এর মধ্যে আর কোনো দেখা শোনা চলবে না। তাই, এই মরুভূমির বন্ধুত্বের মধ্যে ভ্রমণের উপসংহারটা ভালোই লাগছে। আমার বেদুয়িন নিমন্ত্রণকর্তাকে বললুম যে, বেদুয়িন আতিথ্যের পরিচয় পেয়েছি কিন্তু বেদুয়িন দস্যুতার পরিচয় না পেলে তো অভিজ্ঞতা শেষ করে যাওয়া হবে না। তিনি হেসে বললেন, তার একটু বাধা আছে। আমাদের দস্যুরা প্রাচীন জ্ঞানীলোকদের গায়ে হস্তক্ষেপ করে না। এইজন্যে মহাজনরা যখন আমাদের মরুভূমির মধ্যে দিয়ে পণ্য নিয়ে আসে তখন অনেক সময় বিজ্ঞ চেহারার প্রবীণ লোককে উটের পরে চড়িয়ে তাদের কর্তা সাজিয়ে আনে। আমি তাকে বললুম, চীনে ভ্রমণ করবার সময় আমার কোনো চৈনিক বন্ধুকে বলেছিলেম একবার চীনের ডাকাতের হাতে ধরা পড়ে আমার চীন-ভ্রমণের বিবরণটাকে জমিয়ে তুলতে ইচ্ছা করে। তিনি বললেন চীনের ডাকাতেরা আপনার মতো বৃদ্ধ কবির পরে অত্যাচার করবে না, তারা প্রাচীনকে ভক্তি করে। সত্তর বছর বয়সে যৌবনের পরীক্ষা চলবে না। নানাস্থানে ঘোর। শেষ হল, বিদেশীর কাছ থেকে কিছু ভক্তি নিয়ে শ্রদ্ধা নিয়েই দেশে ফিরে যাব, তারপরে আশা করি কর্মের অবসানে শান্তির অবকাশ আসবে। যুবকে যুবকে দ্বন্দ্ব ঘটে সেই দ্বন্দ্বের আলোড়নে সংসার প্রবাহের বিকৃতি দূর হয়। দস্যু যখন বৃদ্ধকে ভক্তি করে তখন সে তাকে আপন জগৎ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। যুবকের সাজেই তার শক্তির পরীক্ষা, সেই দ্বন্দ্বের আঘাতে শক্তি প্রবল থাকে, অতএব ভক্তির সুদূর অন্তরালে পঞ্চাশোর্ধং বনং ব্রজেৎ।