পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬
জাপান-যাত্রী

কানায় ভরে উঠেচে। এতদিন যেরকম করে মনের শক্তি বহন করেচি, সে যেন চালুনিতে জল ধরা, কেবল গোলমালের ছিদ্র দিয়ে সমস্তবেরিয়ে গেছে; আর এখানে এ যেন ঘটের ব্যবস্থা। আমাদের দেশের ক্রিয়াকর্ম্মের কথা মনে হল। কি প্রচুর অপব্যয়! কেবলমাত্র জিনিষপত্রের গণ্ডগোল নয়, মানুষের কি চেঁচামেচি, ছুটোছুটি, গলা-ভাঙাভাঙি! আমাদের নিজের বাড়ির কথা মনে হল। বাঁকাচোরা উঁচুনীচু রাস্তার উপর দিয়ে গোরুর গাড়ি চলার মত সেখানকার জীবনযাত্রা। যতটা চল্‌ছে তার চেয়ে আওয়াজ হচ্ছে ঢের বেশী। দরোয়ান হাঁক দিচ্চে, বেহারাদের ছেলেরা চেঁচামেচি কর্‌চে, মেথরদের মহলে ঘোরতর ঝগড়া বেধে গেছে, মাড়োয়াড়ি প্রতিবেশিনীরা চীৎকার শব্দে একঘেয়ে গান ধরেচে, তার আর অন্তই নেই। আর ঘরের ভিতরে নানা জিনিসপত্রের ব্যবস্থা এবং অব্যবস্থা, তার বোঝা কি কম! সেই বোঝা কি কেবল ঘরের মেঝে বহন কর্‌চে! তা নয়, প্রতিক্ষণেই আমাদের মন বহন কর্‌চে। যা গোছালো, তার বোঝা কম; যা অগোছালো, তার বোঝা আরো বেশী,―এই যা তফাৎ। যেখানে একটা দেশের সমস্ত লোকই কম চেঁচায়, কম জিনিষ ব্যবহার করে, ব্যবস্থাপূর্ব্বক কাজ কর্‌তে যাদের আশ্চর্য্য দক্ষতা,―সমস্ত দেশ জুড়ে তাদের যে কতখানি শক্তি জমে উঠচে, তার কি হিসেব আছে?

 জাপানীরা যে রাগ করেনা, তা নয়, কিন্তু সকলের কাছেই একবাক্যে শুনেছি, এরা ঝগড়া করে না। এদের গালাগালির