পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপান-যাত্রী
৯৭

অভিধানে একটিমাত্র কথা আছে—বোকা—তার ঊর্দ্ধে এদেয় ভাষা পৌঁছায় না! ঘোরতর রাগারাগি মনান্তর হয়ে গেল, পাশের ঘরে তার টুশব্দ পৌঁছল না,―এইটি হচ্চে জাপানী রীতি। শোকদুঃখ সম্বন্ধেও এই রকম স্তব্ধতা।

 এদের জীবনযাত্রায় এই রিক্ততা, বিরলতা, মিতাচার কেবলমাত্র যদি অভাবাত্মক হত, তাহলে সেটাকে প্রশংসা করবার কোনো হেতু থাক্‌ত না। কিন্তু এইত দেখচি, এর ঝগড়া করে না বটে, অথচ প্রয়োজনের সময় প্রাণ দিতে প্রাণ নিতে এরা পিছপাও হয় না। জিনিসপত্রের ব্যবহারে এদের সংযম, কিন্তু জিনিসপত্রের প্রতি প্রভুত্ব এদের ত কম নয়। সকল বিষয়েই এদের যেমন শক্তি, তেমনি নৈপুণ্য, তেমনি সৌন্দর্য্য বোধ।

 এ সম্বন্ধে যখন আমি এদের প্রশংসা করেচি, তখন এদের অনেকের কাছেই শুনেছি যে, “এটা আমরা বৌদ্ধধর্ম্মের প্রসাদে পেয়েচি। অর্থাৎ বৌদ্ধধর্ম্মের একদিকে সংযম আর একদিকে মৈত্রী, এই যে সামঞ্জস্যের সাধনা আছে, এতেই আমরা মিতাচারের দ্বারাই অমিত শক্তির অধিকার পাই। বৌদ্ধধর্ম্ম বে মধ্যপথের ধর্ম্ম।”

 শুনে আমার লজ্জা বোধ হয়। বৌদ্ধধর্ম্ম ত আমাদের দেশেও ছিল, কিন্তু আমাদের জীবনযাত্রাকে ত এমন আশ্চর্য্য ও সুন্দর সামঞ্জস্যে বেঁধে তুল্‌তে পারে নি। আমাদের কল্পনার