পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০০
জাপান-যাত্রী

কর্ত্তব্যের পথে চল্‌বার সদুপায় হচ্চে রসের উপবাস,―তারা জগতের আনন্দকে মুড়িয়ে ফেলাকেই জগতের ভাল করা মনে করে।

 য়ুরোপে যখন গেছি, তখন তাদের কলকারখানা, তাদের কাজের ভিড়, তাদের ঐশ্বর্য্য এবং প্রতাপ খুব করে চোখে পড়েচে এবং মনকে অভিভূত করেচে। তবু “এহ বাহ্য।” কিন্তু জাপানে আধুনিকতার ছদ্মবেশ ভেদ করে যা চোখে পড়ে, সে হচ্চে মানুষের হৃদয়ের সৃষ্টি। সে অহঙ্কার নয়, আড়ম্বর নয়,—সে পূজা। প্রতাপ নিজেকে প্রচার করে; এই জন্যে যতদূর পারে বস্তুর আয়তনকে বাড়িয়ে তুলে’ আর-সমস্তকে তার কাছে নত কর্‌তে চায়। কিন্তু পূজা আপনার চেয়ে বড়কে প্রচার করে; এই জন্যে তার আয়োজন সুন্দর এবং খাঁটি, কেবলমাত্র মস্ত এবং অনেক নয়। জাপান আপনার ঘরে বাইরে সর্ব্বত্র সুন্দরের কাছে আপন অর্ঘ্য নিবেদন করে দিচ্চে। এদেশে আসবামাত্র সকলের চেয়ে বড় বাণী যা কানে এসে পৌঁছয় সে হচ্চে “আমার ভাল লাগ্‌ল, আমি ভাল বাসলুম।” এই কথাটি দেশসুদ্ধ সকলের মনে উদয় হওয়া সহজ নয়, এবং সকলের বাণীতে প্রকাশ হওয়া আরো শক্ত। এখানে কিন্তু প্রকাশ হয়েচে। প্রত্যেক ছোট জিনিষে, ছোট ব্যবহারে, সেই আনন্দের পরিচয় পাই। সেই আনন্দ, ভোগের আনন্দ নয়,—পূজার আনন্দ। সুন্দরের প্রতি এমন আন্তরিক সম্ভ্রম অন্য কোথাও দেখি নি। এমন সাবধানে যত্নে, এমন শুচিতা রক্ষা