পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপান-যাত্রী
১০১

করে সৌন্দর্য্যের সঙ্গে ব্যবহার করতে, অন্য কোনো জাতি শেখে নি। যা এদের ভাল লাগে, তার সামনে এরা শব্দ করে না। সংযমই প্রচুরতার পরিচয়, এবং স্তব্ধতাই গভীরতাকে প্রকাশ করে, এরা সেটা অন্তরের ভিতর থেকে বুঝেচে। এবং এরা বলে’সেই আন্তরিক বোধশক্তি এরা বৌদ্ধধর্ম্মের সাধনা থেকে পেয়েছে। এরা স্থির হয়ে শক্তিকে নিরোধ করতে পেয়েছে বলেই, সেই অক্ষুন্ন শক্তি এদের দৃষ্টিকে বিশুদ্ধ এবং বোধকে উজ্জ্বল করে তুলেচে।

 পূর্ব্বেই বলেছি, প্রতাপের পরিচয়ে মন অভিভূত হয়—কিন্তু এখানে যে পূজার পরিচয় দেখি, তাতে মন অতিভবের অপমান অনুভব করে না। মন, অনিন্দিত হয়, ঈর্ষান্বিত হয় না। কেননা, পূজা যে আপনার চেয়ে বড়কে প্রকাশ করে, সেই বড়র কাছে সকলেই আনন্দমনে নত হতে পারে, মনে কোথাও বাজে না। দিল্লিতে যেখানে প্রাচীন হিন্দু রাজার কীর্ত্তিকলার বুকের মাঝখানে কুতুবমিনার অহঙ্কারের মুষলের মত খাড়া হয়ে আছে, সেখানে সেই ঔদ্ধত্য মানুষের মনকে পীড়া দেয়, কিম্বা কাশীতে যেখানে হিন্দুর পূজাকে অপমানিত করবার জন্যে আরঙজীব মসজিদ স্থাপন করেছে, সেখানে না দেখি শ্রীকে, না দেখি কল্যাণকে। কিন্তু যখন তাজমহলের সাম্‌নে গিয়ে দাঁড়াই, তখন এ তর্ক মনে আসে না যে, এটা হিন্দুর কীর্ত্তি, না মুসলমানের কীর্ত্তি। তখন এ’কে মানুষের কীর্ত্তি বলেই হৃদয়ের মধ্যে অনুভব করি।