পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপান-যাত্রী

আক্রমণ করেচে। অর্দ্ধেক মানুষ অর্দ্ধেক জন্তুর মত তাদের আকার, অত্যন্ত কুৎসিত―তাদের কেউ বা খুব সমারোহ করে আস্‌চে, কেউ বা আড়ালে আবডালে উঁকিঝুঁকি মারচে। কিন্তু তবু এরা সবাই বাইরেই আছে—ঘরের ভিতরে তার সাম্‌নে সকলের চেয়ে তার বড় রিপু বসে আছে—তার মূর্ত্তি ঠিক বুদ্ধের মত। কিন্ত লক্ষ্য করে দেখ্‌লেই দেখা যায়, সে সাঁচ্চা বুদ্ধ নয়,― স্থূল তার দেহ, মুখে তার বাঁকা হাসি। সে কপট আত্মম্ভরিতা, পবিত্র রূপ ধরে এই সাধককে বঞ্চিত করচে। এ হচ্চে আধ্যাত্মিক অহমিকা, শুচি এবং সুগম্ভীর মুক্তস্বরূপ বুদ্ধের ছদ্মবেশ ধরে আছে—একেই চেনা শক্ত—এই হচ্ছে অন্তরতম রিপু, অন্য কদর্য্য রিপুরা বাইরের। এইখানে দেবতাকে উপলক্ষ্য করে মানুষ আপনার প্রবৃত্তিকে পূজা করচে।

 আমরা যাঁর আশ্রয়ে আছি, সেই হারা সান গুণী এবং গুণজ্ঞ। তিনি রসে হাস্যে ঔদার্য্যে পরিপূর্ণ। সমুদ্রের ধারে, পাহাড়ের গায়ে তাঁর এই পরম সুন্দর বাগানটি সর্ব্বসাধারণের জন্যে নিত্যই উদ্‌ঘাটিত। মাঝে মাঝে বিশ্রামগৃহ আছে,― যে খুসি সেখানে এসে চা খেতে পারে। একটা খুব লম্বা ঘর আছে, সেখানে যারা বনভোজন করতে চায় তাদের জন্যে ব্যবস্থা আছে। হারা সানের মধ্যে কৃপণতাও নেই, আড়ম্বরও নেই, অথচ তাঁর চারদিকে সমারোহ আছে। মূঢ় ধনাভিমানীর মত তিনি মূল্যবান জিনিষকে কেবলমাত্র সংগ্রহ করে রাখেন না,―তার মূল্য