পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপান-যাত্রী

তুমি যে লেখাটা লিখচ, ওটাকে কি বল্‌বে? সাহিত্য, না তত্ত্বালোচনা।

 নাই বল্লুম তত্বালোচনা। তত্ত্বালোচনায় যে ব্যক্তি আলোচনা করে, সে প্রধান নয়, তত্ত্বটাই প্রধান। সাহিত্যে সেই ব্যক্তিটাই প্রধান, তত্ত্বটা উপলক্ষ্য। এই যে শাদা মেঘের ছিটে-দেওয়া নীল আকাশের নীচে শ্যামল-ঐশ্বর্যময়ী ধরণীর আঙিনার সামনে দিয়ে সন্যাসী জলের স্রোত উদাসী হয়ে চলেচে, তার মাঝখানে প্রধানত প্রকাশ পাচ্ছে দ্রষ্টা আমি। যদি ভূতত্ত্ব বা ভূবৃত্তান্ত প্রকাশ কর্‌তে হত, তাহলে এই আমিকে সরে দাঁড়াতে হত। কিন্তু এক-আমির পক্ষে আর-এক আমির অহেতুক প্রয়োজন আছে, এই জন্য সময় পেলেই আমরা ভূতত্ত্বকে সরিয়ে রেখে সেই আমির সন্ধান করি।

 তেম্‌নি করেই কেবলমাত্র দৃশ্যের মধ্যে নয়, ভাবের মধ্যেও যে ভেসে চলেছে, সেও সেই দ্রষ্টা-আমি। সেখানে, যা বল্‌চে সেটা উপলক্ষ্য, যে বল্‌চে সেই লক্ষ্য। বাহিরের বিশ্বের রূপধারার দিকেও আমি যেমন তাকাতে তাকাতে চলেচি, আমার অন্তরের চিন্তাধারা ভাবধারার দিকেও আমি তেমনি চিত্তদৃষ্টি দিয়ে তাকাতে তাকাতে চলেচি। এই ধারা কোনো বিশেষ কর্ম্মের বিশেষ প্রয়োজনের সূত্রে বিধৃত নয়। এই ধারা প্রধানত লজিকের দ্বারাও গাঁথা নয়, এর গ্রন্থনসূত্র মুখ্যত আমি। সেইজন্যে আমি কেয়ারমাত্র করিনে সাহিত্য সম্বন্ধে বক্ষ্যমান রচনাটিকে লোক পাকা কথা বলে গ্রহণ করিবে কি না। বিশ্বলোকে এবং